লকডাউনে থেমে নেই লক্ষ্মীপুরের ওসিসি কার্যক্রম

করোনা ও লকডাউনে থেমে নেই লক্ষ্মীপুরের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) কার্যক্রম ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর ||  

করোনা ও লকডাউনে থেমে নেই লক্ষ্মীপুরের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) কার্যক্রম ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ৩০ মার্চ ২০২১ ইং পর্যন্ত করোনাকালীন ২৮৮ জন নির্যাতিত নারী ও শিশুকে সেবা প্রদান করা হয় ।

এর মধ্যে ১৬৭ জনকে মনো- সামাজিক কাউন্সিলিং প্রদান করা হয় । ৬৭ জনকে পারস্পরিক মধ্যস্ততা, ২৪ জনকে আইনী সহায়তা,২৭ জনকে পুলিশি সহায়তা এবং ৩ জনকে প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত করা হয় ।

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার  বাবুরহাট থেকে আগত এক নারী একজন বলেন, আমার স্বামী রিক্সাচালক । তার সাথে ভরণপোষনের দাবী নিয়ে প্রায় ঝগড়া হত । এ জন্য সে আমাকে বিভিন্ন সময়ে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয় । আমি দুইটা বাচ্চা নিয়ে চিন্তার মধ্যে পড়ে যেতাম ।

বাপের বাড়ির এক মুরুব্বির মাধ্যমে জেলা সদর হাসপাতালের ওসিসিতে আসলে তারা আমার বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন । আমাকে হতাশ না হওয়ার জন্য সাহস যোগায়  এবং আমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে তাকেও বুঝায় । আমি এবং আমার স্বামীর মধ্যে এখন কোন বিরোধ নেই । মূলত তাদের সহায়তার আমাদের সংসারে এখন শান্তি বিরাজ করছে।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে আগত এক নারী একজন বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার বিরোধ হলে স্বামী আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে বাসা থেকে বের করে দেয় । এক প্রতিবেশির মাধ্যমে আমার ভাইদের খবর দিলে তারা আমাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে আসলে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি)র নজরে পড়ে । আমার দুইটা সন্তান  থাকায় স্থানীয় মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয় ।

বাঙ্গাখা ইউনিয়ন থেকে আগত একজন নারী বলেন, আমার স্বামী যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করলে নিরাপত্তার জন্য বাবার বাড়ি চলে যাই । এর ৩/৪ দিন পর বিশ^স্ত সূত্রে জানতে পারলাম সে আমাকে তালাকনামা পাঠিয়েছে  আমার স্বামী। তখন কি করবো বুঝতে পাচ্ছি না । লকডাউনের কারনে সব অফিস-আদালত বন্ধ ।

এলাকার একজনের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ওসিসিতে যাই । তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সদর থানার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন । আমার উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতা অনেক কমে যায় ।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি)র প্রোগ্রাম অফিসার মো. খালেদ মাহমুদ বলেন, করোনাকালীন লকডাউনে আমাদের প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশক্রমে দেশব্যাপী অন্যান্য ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি)র কর্মীদের মত আমাদের সেলও স্বাস্থ্যবিধি মেনে  জরুরী সেবার আওতায় নির্যাতিত নারী ও শিশুকে সহযোগিতা করে থাকে ।

তিনি আরও বলেন লকডাউনে বেশিরভাগ নারী ও পুরুষ ঘরমুখো থাকায় পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো বেশি ঘটে । আমরা নির্যাতিত নারী ও শিশুকে সরকারি ও বেসরকারি সেবায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করি ।

উল্লেখ্য , দেশব্যাপী নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সেবা প্রাপ্তির সুবিধার্থে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি- সেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতাধীন ৪৭ টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২০ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৬৭ টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে । সেলসমূহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদেরও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠন, সুমীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাদের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে ।

কর্মকর্তাগন  জেলা ও উপজেলা নারী ও শিশু প্রতিরোধ কমিটি, বাল্যবিবাহ কমিটি, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা,  জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মেলা, র‌্যালী, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে কর্মকর্তাগন অংশগ্রহণ করে ।

সংবাদ সারাদিন