|| লোটন আচার্য্য, সাভার ||
কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা বাঙলা। যে ভাষাকে রাষ্ট্র্র ভাষা করবার দাবিতে রাজপথে নেমে ছিলেন শত শত বাঙালী। তাদের মধ্যে এক জন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। তিনি ২০১৪ সালে ৮ই অক্টোবর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তিনি এখনো তার চোখের দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন রেশমা নামে এক স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে।
রেশমা ধামারাইয়ে সূয়াপুর ইউনিয়নের শিয়ালকূল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের মেয়ে রেশমা এখন পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী। ভাষা মতিনের কর্ণিয়ায় নিজের চোখের আলো ফিরে পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন রেশমা।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Motin.jpg?resize=180%2C268&ssl=1)
রেশমা জানান, মাত্র ৭ বছর বয়সে তার বাম চোখে সমস্যা দেখা দেয়। সে সময় তার চোখ অনেক চুলকাতো। এরপর থেকে যতই দিন যেতে থাকে ততই তার চোখের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। একের পর এক চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও চোখের সমস্যার উন্নতি ঘটেনি। চোখ চুলকানের সাথে পানি পড়াও শুরু হয়। কমতে শুরু করে দৃষ্টিশক্তি। এরমধ্যে ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে ইচ্ছে আর দৃঢ় মনোবলে স্নাতক শেষ করেন রেশমা। কিন্তু বাম চোখের দৃষ্টি তখন নিভু নিভু।
এক প্রতিবেশীর পরামর্শে বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি পরিচালিত ওএসবি হাসপাতালে যান চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকেই প্রথম তার কর্ণিয়ার সমস্যার কথা জানতে পারেন। চিকিৎসক তাকে আরো জানান, বাম চোখের কর্ণিয়ার কারনে ডান চোখেও সমস্যা হতে পারে। তখন পরিবারের মধ্যে এক উৎকণ্ঠা দেখা যায়। কিছুদিন পার হতেই ২০১৩ সালেই পুরোপুরি বাম চোখের আলো নিভে আসে। অন্ধ হয়ে যান রেশমা। এরপরে ২০১৩ সালে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সন্ধানীতে কর্ণিয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। কিন্তু তার চোখের কর্ণিয়া পাওয়া যাচ্ছিল না।
এরইমধ্যে রেশমা জানতে পারেন ভাষা সৈনিক আবুদল মতিন মারা যাওয়ার সময় তার দুই কর্ণিয়া দান করে গেছেন। সেটা ২০১৪ সালে ৮ই অক্টোবরের কথা। তখন রেশমা সাথে সাথে সন্ধানীতে যোগাযোগ করলে তাকে ৯ই অক্টোবর সকালে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। সেদিনই সকালে রেশমার চোখে ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের কর্ণিয়া সংযোজন সম্ভব বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। একই দিন বিকালে রেশমার চোখে প্রতিস্থাপন করা হয় আবদুল মতিনের কর্ণিয়া। ১০ই অক্টোবর সকালে আবারও চোখের আলো ফিরে পান রেশমা।
স্বাস্থ্যকর্মী রেশমা এখন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের চোখে দেখছেন বিশ্ব। কাজ করছেন ধামরাইয়ের সূয়াপুর কমিনিউটি ক্লিনিকে। সেবা দিচ্ছেন গ্রামের হতদরিদ্র মানুষদেরকে।
একইসঙ্গে এমন একজন গুনী মানুষের কর্ণিয়া পেয়ে রেশমা নিজেকেও মনে করেন সৌভাগ্যবান মানুষ। কৃতজ্ঞতা জানান গুনি এই মানুষের মানুষটিকে।