|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও) ||
বিস্তর অনিয়মের মধ্যেই চলছে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর নির্মাণকাজ। বালু সিমেন্ট ও কিছু ঘরের মুলভিত্তিতে অনিয়ম করা হচ্ছে। অনুমোদিত প্রথম শ্রেণী ইটের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট। ইটেরর গাঁথুনিতে অধিকতর মোটা মসলা দিয়ে কাজ করে ইট বাঁচানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এমনও অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে অফিসের এক কর্মচারী রাজমিস্ত্রি নন এমন একজনকে দিয়ে চুক্তিতে কাজ করানো ছাড়াও নিজে এমন সব অনিয়মে মদদ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন নিজে হোসেনগাঁও ইউনিয়নের হাজেরা দিঘীর ঘরের দেয়ালও ভেঙে ফেলেছেন।
উপজেলা উপজেলা প্রকল্প অফিস সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় মোট ২৬৬টি গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। যেখানে প্রতিটি বাড়ীর জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার নেকমরদ এলাকার ঘনশ্যামপুর পুকুর পাড় আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থায়নে বরাদ্দ ৩০টি ঘরের কাজ চলছে। ইট গাঁথুনির সময় বিল্ডিং নির্মাণ বিধি মানা হচ্ছে না। ঘরের মুল ভিত্তিতে অধিকতর মোটা মসলা দিয়ে ইট গাঁথা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ইট বাঁচানোর জন্যই এমনভাবে মোটা মসলা দিয়ে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। অথচ প্রকৌশলীদের মতে ইট থেকে ইটের পরিমাপ নিতে আধা ইঞ্চির বেশি মসলা ব্যবহার করলে ইটের জয়েন্ট হালকা হয়ে যায়। এতে ওয়ালের লোড ক্ষমতা কম হয়।
স্থানীয়রা কাজের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, মিস্ত্রিদের দোষ কী, তাদের যেভাবে কাজ করতে বলেছে তারা সেভাবেই করেছে। তবে কাজ যেভাবে হচ্ছে তাতে এসব ঘরের স্থায়ীত্ব কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ তারা যেভাবে ঘরের ভিত্তি দিচ্ছে তা এ এলাকার বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়াও যেভাবে সিমেন্ট বালু দিয়ে মসলা তৈরী করা হচ্ছে তাতেও অনুপাত ঠিক রাখা হচ্ছে না।
প্রথম শ্রেণীর ইটের মধ্যে ২য় এমনকি তৃতীয় শ্রেণীর ইটও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনসব অভিযোগের ভিত্তিতে সিমেন্ট মসলা নিয়ে নির্মাণমিস্ত্রি তরিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যথা নিয়মে মসলা তৈরী করা হচ্ছে, তবে নিয়মটা কি তার কোন সুদত্তর তিনি দেননি।
এসময় স্থানীয়রা ঘর নির্মাণের জন্য স্তুপ করে রাখা ইটের শ্রেণী দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, এখানে প্রায় পাঁচশত ইট রয়েছে তারমধ্যে প্রায় দেড়শ’র বেশী ইট ২য় ও তৃতীয় শ্রেণীর। এ সময় নির্মাণ মিস্ত্রিকে ইটের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনিও বলেন, ভাটা থেকে ইট নেওয়ার সময় একটু আধটু এমন হয়েই থাকে। পাশেই স্থানীয় আরেক ব্যক্তি এ প্রতিবেদকে ডেকে দেখান, তার রুমের রান্নাঘর ও বাথুরমের মূলভিত্তি সরাসরি মাটির উপর দেওয়া হচ্ছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মিস্ত্রিদের বার বার খানিকটা মাটি খুঁড়ে দিয়ে ভিত্তি দিতে বললেও তারা কথা শুনছেন না। এ সময় এ প্রতিবেদক নির্মাণ মিস্ত্রিকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, পূর্ব দিকের ঘরগুলোর ভিত্তির সাথে মেকাপ নিতে কাজ তদারকি ব্যক্তির নির্দেশে আমরা এটি করছি, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। স্থানীয়রা বলেন, যেভাবে এই রান্নাগর ও বাথরুমটি করা হচ্ছে তাতে বর্ষার সময় পানির স্রোতে ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে না।
এদিকে বিশ্বস্ত একটি সুত্র জানায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী শাহনেওয়াজ ইউএনওকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে তার মনোনীত পার্শ্ববর্তী হরিপুর উপজেলার আব্দুস সামাদের সাথে চুক্তি করে ঘর নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন। যিনি পেশাগত রাজমিস্ত্রি নন। আর এতে তিনিও কমিশন বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা ব্যবসায়ী বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ২০টির বেশী ভাটা অথচ নির্ধারিত দুই একটি ভাটা থেকে ইট নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি শুনেছি গাড়ি প্রতি পিআইও অফিসের একজন ব্যক্তি একটি নিদির্ষ্ট অংকের টাকা কমিশন বাণিজ্য করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অফিস সহকারী শাহনেওয়াজের মুঠোফোনে শুক্রবার বিকেল ৪টায় ফোন দিলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামিয়েল মার্ডি মুঠোফোনে বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না। বিষয়টি আমি দেখছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, আপনি আমার গোল ঘরে আসেন সরাসরি কথা বলি।