যুবলীগনেতার ছত্রচ্ছায়ায় অভিযোগের রাজত্ব গড়ছেন এক ইউপি সদস্য

অভিযোগ এই দুলাল ভুঁইয়া উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে করে যাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড। বিএনপি থেকে আসা এই নেতা পরোয়া করেন না স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ ||

ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি নেতা থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকানো নয়। শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়া। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এই অভিযুক্ত মানুষটি চুনারুঘাট উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও ২ নম্বর আহম্মাদাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দুলাল ভুঁইয়া।

অভিযোগ এই দুলাল ভুঁইয়া উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে করে যাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড। বিএনপি থেকে আসা এই নেতা পরোয়া করেন না স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও।  

দুলাল ভুঁইয়ার অন্য অনেক ব্যবসার মধ্যে একটি হচ্ছে ডিসসংযোগ ব্যবসা। এটি সাধারণ ডিস ব্যবসা নয়, এ যেন দাপট দেখানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে তার। ডিস ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে আমুরোড বাজারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক ক্ষোভ-অসন্তোষ। ডিস ব্যবসার লেবেলে সন্ত্রাসীদের মতো নৃশংস কর্মকান্ডও চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইতোমধ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকজনকে প্রানে মেরে ফেলার চেষ্টাও করছেন তিনি। শুধু তাই নয় পথের কাটা কেউ হলেই তাদেরকে পিটিয়ে আহত করেন তিনি। এইসব বিষয় নিয়ে চুনারুঘাট থানায় ডজন খানেক মামলাও আছে তার নামে। কিছু মামলা সমাধান হলেও প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে আরো্ বেশ কিছু মামলা।

বাংলাদেশ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর অধীনে নিনা ভিশন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক নামে চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড বাজারে অনুমোদন নিয়ে আসেন মো. মোস্তাক উদ্দিন আখঞ্জি ওরপে (মুসা)। যার  অনুমোদন এখনো রয়েছে তার নামেই। নিজের ডিস ব্যবসা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চুনারুঘাট অফিসার ইনচার্জ বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন মোস্তাক উদ্দিন আখঞ্জি। ব্যবসার দাবি করায় দুলাল ভূঁইয়া এবং যুবলীগ নেতা আনোয়ারে নেতৃত্বে নির্মম নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তিনি। 

মোস্তাক উদ্দিন আখঞ্জিসহ স্থানীয় অনেকেই জানান, দুলাল ভূঁইয়ার খুটির জোর হচ্ছেন ২ নম্বর আহম্মাদাবাদ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক উপজেলা যুবলীগ নেতা কে এম আনোয়ার হোসেন। যিনি দুলাল ভুঁইয়ার ব্যবসায়িক অংশিদারও । তাই তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই যুবলীগ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে ভয় ভীতির দেখান দুলাল ভুঁইয়া। 

সংবাদ সারাবেলার অনুসন্ধানে উঠে আসে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অবৈধ কর্মকাণ্ডের ঘটনা। দুলাল ভূঁইয়া এখন সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হলেও কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছেন সসন্ত্রাসীদের মতো, সন্ধ্যা হলেই বসান তাস ও রমরমা মাদকের আসর। দুলাল ভুঁইয়া নিজে এখন সরকারী দল করলেও তার ছেলে সরকার বিরোধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে বর্তমানে ঢাকায় পুলিশ হেফাজতে আছেন।

দুলাল ভূঁইয়া ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার চুনারুঘাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আনোয়ার হোসেনের হাতে গত কয়েক দিন আগে নির্যাতনের শিকার হন নিনা ক্যাবল অপারেটরের আইনী মালিক ডিস ব্যবসায়ী মোস্তাক উদ্দিন আখঞ্জি ওরপে (মুসা)। এসময়ে মুসার মামা হ আহত হয়েছিলেন অনেকেই।

এ নিয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মুসা নিজে বাদী হয়ে, ইউপি সদস্য দুদাল ভূইয়া, চুনারুঘাট উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি কে এম আনোয়ার হোসেনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। মামলা নং সি আর ৪১৩/২০।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা যুবলীগ নেতা কে এম আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমুরোড বাজারে (আহম্মদাবাদ ক্যাবল অপারেট) নামে লাইসেন্সধারী ডিস লাইন আমার আছে। সেটি পরিচালনার জন্য আমি কয়েকজন অংশিদার নিয়েছি তাদের অনুরোধে তাদের নাম আমি প্রকাশ করতে পারছি না। অন্য একটি ক্যাবল নেটওয়ার্কের সাথে এলাকা নির্ধারণ নিয়ে একটি সংঘর্ষ হয়েছে ও মামলা হয়েছিল তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে বিষটি সমাধান হয়েছে।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও অহম্মদাবাদ ইউনিয়নে মেম্বার দুলাল ভূইয়া বলেন, আহম্মদাবাদ ক্যাবল নেটওয়ার্কের মালিক কে এম আনোয়ার, এটি আমার নয়।

নিনা ক্যাবল নেটওয়ার্কের মালিক মুসার সাথে সংঘর্ষের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, বাজারে কোন ঘটনা ঘটলে সাধারণ জনগণের মতো একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে আমিও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম মাত্র তাছাড়া আর কিছুই না। 

এ বিষয়ে কথা হয় নিনা ভিশন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মালিক মোস্তাক উদ্দিন আখঞ্জি ওরপে (মুসা) সাথে। তিনি জানান, দুলাল ভূইয়া এবং যুবলীগ নেতা আনোয়ারের নিজস্ব ক্যাবল অপারেটের লাইসেন্স নেই। তারা আমার এলাকায় অবৈধভাবে ডিস সংযোগ দিয়ে আমার ব্যবসার ক্ষতি করছে। আমি উপায় না পেয়ে ২০১৭ চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু কোন ব্যবস্হা নেননি তারা।

পরবর্তীতে আবারো ২০২০ সালে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আনোয়ার এবং দুলাল ভূইয়ার নেতৃত্বে দেশি অস্ত্র নিয়ে আমাকে প্রানে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাদের আক্রমণে আমার মামা ও আমিসহ আমার কয়েকজন আত্নীয় আহত হই। পরবর্তীতে উপায় না পেয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। যা এখন তদন্তের জন্য জেলা ডিবি পুলিশের হাতে রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ডিবি পুলিশের এস আই মোজাম্মেল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। এখন আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্হা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সারাদিন