|| আব্দুল্লাহ হেল বাকী, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে ||
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় নিভৃত পল্লী দুই নম্বর আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রাম। সেই গ্রামেরই মানুষ খলিলুর রহমান। বয়স এখন ৬৩। ছোটবেলা থেকেই গাছপালার প্রতি রয়েছে তার অগাধ প্রেম। গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় বেশ কয়েকটি লিচুর বাগান।
নিজের বাগানেই একদিন তিনি দেখলেন লিচুফুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছিরা নাচানাচি করছে। এসব মৌমাছিদের কিভাবে কাছে আনা যায় এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহের অভিযান।
খলিলুর রহমান নিজেকে একজন সফল কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। আলাপের ফাঁকে তিনি বলেন, হঠাৎ একদিন নিজের মনে দুষ্টুমি চেপে বসল। দুই হাতে মিষ্টির রস মেখে বাগানের নিচে দাঁড়াতেই দেখি ধীরে ধীরে দুই একটা করে মৌমাছি এসে আমার হাতে বসছে। প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম নড়াচড়া না করে চুপ করে বসেই ছিলাম।
এক সময় দেখলাম লিচুফুল থেকে নিচে নেমে এসে মৌমাছিরা আমার হাতে মাখানো মিষ্টির রস সংগ্রহ করছে। ভাবলাম এখানে মৌমাছিদের যদি একটা আবাস করে দিতে পারি তাহলে সেখান থেকে তো আমিও মধু সংগ্রহ করতে পারব। সেই ভাবনা থেকেই আমি মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহ করা শুরু করি।
এক পর্যায়ে খলিলুর রহমান উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১৯৯৭-৯৮ সালে মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহের ওপরে প্রণোদনা প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণশেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির আওতায় কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়ে) প্রকল্প থেকে খলিলুর রহমানকে একটি মধু সংগ্রহকারী মেশিন ও একটি মৌ বাক্স দেয়া হয়।
সেই থেকেই চলছে খলিলুর রহমানের মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহ। তাও প্রায় বছর তিনেক হয়ে গেলো। এরইমধ্যে আগ্রাদ্বিগুন বাজারে ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে মধুর ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতি কেজি মধু চারশ’ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। খাঁটি হওয়ায় ইতিমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন খলিলুর রহমান।এখন তিনি স্থানীয়দের কাছে মধু নানা হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
মধু কিনতে আসা নুর ইসলাম বলেন, বাজারে যেসব মধু পাওয়া যায় তার সবগুলোতেই চিনি মেশানো থাকে। মুরুব্বির এক চামচ মধু খেলে জানান দেয়, শরীরে মধু কতটা উপকারী। যা বাজারের মধুতে আমরা পাইনা।
স্থানীয় সাইকেল ব্যবসায়ী রুস্তম আলী জানান, এ বয়সে এসেও তিনি যেভাবে মধু সংগ্রহ করছেন এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তাছাড়া যুগোপযোগী এমন উদ্যোগ তরুণদের নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, গত বিশ বছর ধরে আমরা আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নে কৃষি পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করেছিলাম। যার ফলে কৃষকরা শরিষাসহ বিভিন্ন ফসল চাষের মাধ্যমে বীজ সংরক্ষণ ও প্যাকেট জাত করে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে আমরা তাদেরকে একটি মধু সংগ্রহকারী মেশিন ও মৌ বাক্স দিয়েছিলাম।