সরকারি তালিকায় নাম না থাকাকেই দায়ি করছেন স্বজনরা
|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর ||
সরকারি তালিকায় নাম না থাকার ধাক্কা সইতে না পেরে মৃত্যুকেই বেছে নিলেন মুজিবনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী। মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গত ৩রা ফেব্রুয়ারি একটি তালিকা প্রকাশ করে। যেখানে জামাত আলীসহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কমিটির চাহিদামতো সাক্ষী জোগাড় করতে না পারায় বাতিল করা হয় জামাত আলীর নাম। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বীর এই মুক্তিযোদ্ধা।
স্বজনদের অভিযোগ, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে গোটা জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এই জামাত আলী। অথচ বর্তমান সরকারের চাহিদামতো নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ দিতে না পারায় এই মুক্তিসেনার নাম বাদ দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে। ৬৫ বছর বয়সী বীর এই মুক্তিযোদ্ধা গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে নিজের বাড়িতে মারা যান। মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস দক্ষিণ পাড়ার মৃত জহর বিশ্বাসের।
এ প্রসঙ্গে জামাত আলীর ছেলে রশিদুল ইসলাম জানান, আমার বাবার কাগজপত্র সবই ঠিক আছে, কিন্তু সাক্ষী না থাকায় আমার বাবার নাম সরকারের যাচাই-বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তে বাদ দেয়া হয় নতুন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে। সেই শোক সহ্য করতে না পেরে আমার বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান।
জামাত আলীর মেয়ে ফুলেশ্বরী জানান, যাচাই বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধার নতুন তালিকা থেকে আমার আব্বার নাম বাদ দেয়ার পর যখন তিনি ভাতার টাকা ওঠাতে গিয়ে না পান তখন থেকে টেনশন শুরু করেন।
জামাত আলীর স্ত্রী মহিলা খাতুন জানান, আমার স্বামীকে টেনশন করতে ডাক্তার নিষেধ করেছিলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় আমরা অনেক বোঝানোর পরও তাকে বোঝাতে পারিনি। তিনি সব সময় টেনশন করতেন। টেনশন করতে করতে বুধবার ভোর রাতে সে স্ট্রোক করে পরে মারা যান।
মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন সরকারের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, জামাত আলীর বিষয়ে সিদ্ধান্তটা কমিটির। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করি এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। তবে উপজেলা কমিটি নাম বাতিল করলেও এটা চূড়ান্ত না। যাদের নাম নতুন তালিকায় নেই তারাও আগের মতোই সম্মানী ভাতা পাবেন।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর একাউন্টে কোন কারণে হয়ত ভাতার টাকা এসে পৌঁছায়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এসে যাবে। এছাড়াও যারা বাদ পড়েছে তাদের আপিল করারও সুযোগ রয়েছে।