|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম উত্তর ||
নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজত ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার প্রতিবাদে ধর্মীয় উগ্রবাদি সংগঠটির হামলার প্রথম বলি হলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মো. মহিবুল্লাহ। মামুনুল হক ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় হেফাজতের আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা মো. মহিবুল্লাহ (৫৪) তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে মারা গেছেন। মঙ্গলবার ৬ই এপ্রিল রাত আনুমানিক ১২ টার সময় চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আঘাতের কারণে তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে যায়। গত সোমবার নিউরো সার্জন প্রফেসর ডা. কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা সময় ধরে তার অপারেশন করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে (মঙ্গলবার) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এবং সেখানে তার স্ট্রোক হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে সে মারা যায়।’
নিহত মহিবুল্লাহ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়া গ্রামের মৃত খায়রুজ্জামানের ছেলে। তিনি কোদালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান রেখে যান।
গত শনিবার ৩রা এপ্রিল রাত ৮টার দিকে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজত ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গুনিয়ার কোদালায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে পূর্ব কোদালা ৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত পৌঁছলে তাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। বাধার মুখে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হলে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সামনে বিক্ষোভরত হেফাজত কর্মীরা লাটিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মুহিব্বুল্লাহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলদার আজম লিটন আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে গুরুতর আহত মুহিবুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় দাঙ্গা সৃষ্টি ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা দুটিতেই বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতা-কর্মী ও হেফাজত সমর্থকসহ ৬৪ জন এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনসহ মোট ২১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা বিএনপি নেতা মো. ইউনুছ মনিকে ।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব মিল্কি মো. মহিবুল্লাহ’র মৃত্যু নিশ্চিত করে বলেন, ‘হামলার ঘটনায় পুলিশ ও আহত যুবলীগের সভাপতি মো. আবদুল জব্বার বাদী হয়ে ২১৪ জনকে আসমি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলা এখন হত্যা মামলায় পরিণত হল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে করা মামলায় কোদালা ইউনিয়নের মো. ফোরকান (৩৫), মো. ইয়াহিয়া (২৮) ও শিলক ইউনিয়নের বাবর আলম (৩৮) নামের ৩ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার মূলহোতা বিএনপি নেতা ইউনুছ মনিসহ বাকিরা পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের আটকে অভিযান চলছে।’
এদিকে আ. লীগ নেতা মো. মহিবুল্লাহ’র মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি।