মানুষ পাচার করছে বিদেশি দুই বিমানসংস্থা

এসব মানুষ পাচার করতে গিয়ে বিমানসংস্থা দুটির কর্মকর্তারা ভিজিট ভিসা বা কনফারেন্স ভিসার আশ্রয় নিয়েছে। এসব ভিসায় রিটার্ন টিকিট থাকার কথা থাকলেও যাদের পাচার করা হয়েছে তাদের কেউ-ই রিটার্ন টিকিট নেননি। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানান।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

বাংলাদেশে রুট রয়েছে এমন দুুটি বিদেশি বিমানসংস্থা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পেরেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। ওই দুই এয়ারলাইন্সের ৫-৭ জন কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এসব মানুষ পাচার করতে গিয়ে বিমানসংস্থা দুটির কর্মকর্তারা ভিজিট ভিসা বা কনফারেন্স ভিসার আশ্রয় নিয়েছে। এসব ভিসায় রিটার্ন টিকিট থাকার কথা থাকলেও যাদের পাচার করা হয়েছে তাদের কেউ-ই রিটার্ন টিকিট নেননি। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এভাবে মানুষ পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। যাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে ইন্টাপোলে আবেদন জানানো হবে। এর আগে গত ১৮ই অক্টোবর ৬ জন পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়। গত ২৭শে নভেম্বর ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। এরা হলেন- মিন্টু মিয়া (কিশোরগঞ্জ), তানজিমুল ওরফে তানজিদ (কিশোরগঞ্জ), জাফর ইকবাল (কিশোরগঞ্জ), নজরুল ইসলাম মোল্লা (মাদারীপুর), শাহাদাত হোসেন (কিশোরগঞ্জ) ও স্বপন (কিশোরগঞ্জ)। গত ২ জুন তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে তানজিমুল ইতালিতে পালিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।

ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ২৬শে মে লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনার পর মানবপাচারের ২৬ মামলার মধ্যে ২৫টি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় আসামি ২৯৯ জন। এখন পর্যন্ত ১৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হবিগঞ্জে করা একটি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সিআইডির সিনিয়র এএসপি জিসানুল হক জানান, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৮ ব্যক্তিকে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায় পাচারকারীরা। ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে অনেককে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে তাদের ত্রিপলী শহরে উচ্চ বেতনের কথা বলে নিয়ে যায়। ত্রিপলীর মিজদায় বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়ার মাফিয়া গ্রুপ ভিকটিমদের অমানবিক নির্যাতন শুরু করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে।

তিনি আরও জানান, ভিকটিমদের নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে দেশে স্বজনদের কাছে পাঠানো হতো। মুক্তিপণ আদায়ের পর গত ২৬শে মে নির্বিচারে গুলি করে ২৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১২ জন গুরুতর আহত হয়। গত ৩রা অক্টোবর সিআইডির উদ্যোগে ৯ জন ভিকটিমকে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন