|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইদ উপলক্ষে দুস্থদের ভিজিএফ চাল বিতরণ নিয়ে তুঘলকী কান্ড চলছে। খাদ্য গুদাম থেকে উন্নতমানের চাল পাঠানোর দাবী করা হলেও মাঝপথে সেই চাল পরিবর্তন হয়ে পচা চাল গেছে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। এনিয়ে দায় স্বীকার করতে রাজী নয় কেউই। তবে একটি পক্ষ বলছে দুর্নীতিবাজ খাদ্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এই অঘটন ঘটিয়েছে। এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার উলিপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ইদ উপলক্ষে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮০৩ মে.টন ৫৬ কেজি চাল ভিজিএফ এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী হাতিয়া ইউনিয়নে বিতরনের জন্য ৬৩ মে. টন ২১০ কেজি চাল বরাদ্দ হয়। শুক্রবার দুপুরে সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে হাতিয়া ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত প্লাষ্টিক বস্তায় খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সরকারি সীল মোহরযুক্ত ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তা প্রতি গাড়ীতে ১৫০ বস্তা করে ৬ টি গাড়ীতে ৯০০ বস্তা চাল পাঠানো হয়। কিন্তু ওই চাল ইউনিয়ন পরিষদে পৌছানোর পূর্বেই নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পঁচা চালে রুপান্তরিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ভিজিএফ এর বরাদ্দকৃত চাল ৬টি গাড়ীতে ৯শ বস্তা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। পরিষদের গুদামে চালের বস্তাগুলো নামানোর সময় ৫টি গাড়ীর চাল উন্নত মানের হলেও ১টি গাড়ীর ১৫০ বস্তা চাল প্লাষ্টিকের পুরানা বস্তা ও সরকারি সীল না থাকায় সন্দেহ হয়। ওই গাড়ীর বস্তাগুলোর চাল খুবই নিম্নমানের খাওয়ার অযোগ্য পঁচা চাল হওয়ায় তা সরকারি খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠাই। খারাপ চালের বিষয়টি আমি ইউএনও ও খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা চালের বস্তাগুলো খাদ্য গুদামে ফেরত পাঠাতে বলেছেন।
নিম্নমানের চাল বহনকারী গাড়ীর চালক নাহিদ ইসলাম বলেন, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ১৫০ বস্তা চাল হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি। এরপর চালগুলো খাবার অযোগ্য হওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেব তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং আমাকে চালের বস্তাগুলো ফেরত নিয়ে যেতে বলে। এদিকে ১৫০ বস্তা নিম্নমানের চালের দায় দায়িত্ব কেউ নিতে রাজি নন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা বলছেন এ চাল আমি গুদাম থেকে সরবরাহ করিনি অপরদিকে গাড়ির চালক বলছেন চালের বস্তা সরকারি গুদাম থেকে আনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খাদ্য ব্যবসায়ী জানান, উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও ধান চাল ব্যসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে এ ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার যোগসাজশে গুদাম থেকে উন্নত মানের চাল ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে পাঠানোর সময় পথিমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে ভালো চাল পরিবর্তন করে নিম্নমানের খাবার অযোগ্য চাল সরবরাহ করে। যেখানে গুদামের ভাল চালের বাজার মূল্য ৪৪-৪৫ টাকা কেজি, সেখানে নিম্নমানের চাল গুলো ২০-২৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
সূত্রটি আরও নিশ্চিত করে, হাতিয়া ইউপি থেকে ফেরত ১৫০ বস্তা চাল সরকারি গুদামে না এনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের গুদামে নামিয়ে নিয়েছে। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নিম্নমানের চালের দায়িত্ব না নেয়ার ফলে ১৫০ বস্তা চাল নিয়ে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের নাটক শুরু হয়েছে। এদিকে ওই সূত্র আরও জানায় প্রভাবশালী এক খাদ্য ব্যবসায়ী নেতা এ নিম্নমানের চালের মালিক। তিনি চালগুলো হাতিয়া ইউপিতে সরবরাহ করেছেন।
এ বিষয়ে খাদ্য ব্যবসায়ী ও মিল চাতাল মালিক সমিতির আহবায়ক মাহফুজুর রহমান বুলেটের সাথে কথা হলে তিনি নিম্নমানের চাল পাল্টানোর বিষয়টির অস্বীকার করেন। তিনি বলেন এই কাজ আমাদের নয়। তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। নিম্নমানের চালের গাড়ীটির ব্যাপারে প্রশাসনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কেনো তদবির করেছিলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য ব্যবসায়ীদের নেতা হিসাবে আমাকে এটি করতে হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) শাহীনুর রহমান বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। গুদাম থেকে ভাল চাল পাঠানো হয়েছে। নিম্নমানের চাল সেখানে কিভাবে পৌছিল তা আমার জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।
১৫০ বস্তা নিম্নমানের চাল ভিন্ন বস্তায় কি করে সেখানে পৌছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাল গুদাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমার দেখার দায়িত্ব না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফেরত পাঠানো নিম্নমানের চাল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান, এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। ওসি এলএসডি (ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা) বিষয়টি সঠিকভাবে বলতে পারবেন। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, হাতিয়া ইউনিয়নে খাদ্য গুদাম থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহের বিষয়ে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। আমি চাল ফেরত পাঠাতে বলেছি। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি। কোনভাবেই নিম্নমানের চালের বিষয়টি মেনে নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখা হবে।