|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ভোলা ||
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের নাজিমউদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে অসহায় তিনটি পরিবারের জমি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। নাজিম ও তার মামা ইউনুছ দরবেশ মিলে গত ১০ বছর ধরে টাকা ও ক্ষমতার জোরে গ্রামের কয়েকটি অসহায় পরিারের জমিতে বাড়িঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা ।
তারা বলেন, একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশে বসলেও নাজিমউদ্দিন সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় এ জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। বরং নাজিমউদ্দিন ওই পরিবারগুলোকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল মান্নানের মেয়ে রহিমা খাতুন জানান, তার বাবার চর রমেশ মৌজার ৭৬ নম্বর খতিয়ানের ১৭৩৮ ও ১৭৩৯ দাগের ডোবা ও বাড়ীর ৩৫ শতাংশ জমির ওয়ারিশসূত্রে মালিক তারা চার বোন। এরা হলেন- রিজিয়া খাতুন, মাহমুদা খাতুন, রহিমা খাতুন, জাহানারা খাতুন। বাবা মারা যাওয়ার পর একেক বোন পৌনে ৯ শতাংশ করে জমির মালিক হয়। এদের মধ্যে জাহানারা বেগম নাজিম উদ্দিনের কাছে সোয়া পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। এ সোয়া পাঁচ শতাংশ জমির দলিল নিয়ে ক্ষমতা ও টাকার জোরে নাজিমউদ্দিন ও তার মামা ইউনুছ দরবেশ তাদের আরো প্রায় ২০ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। একই অভিযোগ করেন রিজিয়া ও মাহমুদা খাতুন।
রহিমা খাতুনের ছেলে মো. জামাল জানান, গত দুই বছর ধরে আমার মা ও খালাদের জমি নাজিমউদ্দিন ও ইউনুছ দরবেশের কাছে ফেরৎ চাইলে তারা নানা টালবাহানা করে আসছেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে মামলা দেই। মামলার এক মাসের মাথায় নাজিমউদ্দিন কাগজপত্র নিয়ে হাজির না হওয়ায় পরিষদ থেকে মামলাটি খারিজ করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাজিমউদ্দিন গংরা জমির গাছ কাটতে গেলে আমরা বাঁধা দেই। ফাঁড়ির পুলিশ এসে গাছকাটা বন্ধ করে দেয়। এবং উভয় পক্ষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলে। পরে ফাঁড়ির পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে কাগজপত্র নিয়ে বসলে নাজিউদ্দিন গংরা আমার খালা জাহানারা খাতুন থেকে ক্রয় করা সোয়া পাঁচ শতাংশ জমির কাগজ দেখাতে পারে। বাকী কাগজ দেখানোর জন্য তিন বারে প্রায় দুই মাসের সময় নিয়েও আজ পর্যন্ত কোনো কাগজ নিয়ে আমাদের সাথে বসতে পারেনি। কাগজপত্র দেখাতে না পেরে গত ২৫শে জানুয়ারী ২০২১ তারিখে আদালতে আমাদের বিরুদ্ধ একটি মিথ্যা মামলা করে। আদালত আগামী ৭ই এপ্রিল২০২১ তারিখে উভয় পক্ষকে হাজির হয়ে নিজেদের অবস্থান জানানোর আদেশ দেন। একই সাথে ওই জমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলেন।
মো. জামাল আরো জানান, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম মাস্টার আমাদেরকে জমি মেপে দেয়ার কথা বলেও তা দেয়নি।
নাজিউদ্দিন গংরা স্থানীয় কোনো শালিস মানে না। তারিখ দিয়েও তারা আসে না। আমরা গরীব হওয়ায় তারা টাকার জোরে আমাদের জমি জোর করে দখল করে আছে। একই সাথে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আমাকে ও আমার বাবা আব্দুল অদুদকে আসামী করেছে। ভবিষ্যতে তারা নিজেদের মধ্যে মার্ডার করেও আমাদেরকে আসামী করবে আশঙ্কা করছি। আমরা ভূমিদস্যু নাজিমদের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
এব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে নাজিমউদ্দিন বলেন, আমরা ২০১৮ সালে আবু তাহের গংদের কাছ থেকে এ জমি কিনেছি। তারা আমদের বাড়ির মধ্যে কোনো জমি পাবে না। আমাদের কেনা জমিও সবটুকু বুঝে পাইনি।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম মাস্টার বলেন, আমি উভয়পক্ষের মধ্যে মিমাংসার চেষ্টা করেছি। আদালতে আমার একটি মামলা ছিলো। কিন্তু ভিএস জরিপ গেজেট না হওয়ায় আমি মামলাটি খারজি করে দিয়েছি। এছাড়াও একটি পক্ষ খুব অসহায়। সেদিক বিবেচনায় রেখে জমিটি মাপার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু নাজিমউদ্দিন গংরা আদালতের মামলা করার কারেন সেটি করা যায়নি। তারপরও আমি চেষ্টা করছি যাতে বিষয়টি নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয়।