|| অনলাইন প্রতিনিধি, ভোলা||
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৯ নম্বর চর মানিকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহ হাওলাদারের অপসারণ দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন পরিষদ সদস্যরা। দাবি মানতে মানববন্ধনও করেছেন তারা। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন অনাস্থাপত্র। তাতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে ভোলার শহরের একটি পত্রিকা অফিসে ওই ইউনিয়নের পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্যদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ইউপি সদস্য মো. খোকন মিয়া জানান, তারা ১১ জন সদস্য ইউপি নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সালের ২২শে মে ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম সভায় অংশ নেন।
প্র্রতি মাসের ২ তারিখে মাসিক সভা করার নিয়ম থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনো সভা না করে ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী, জেলে তালিকা, ভিজিএফ, কাবিখা, টিআর, ভিজিডি, জিআর, এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচী, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারী বে-সরকারি বহু চিঠি মাসিক রেজুলেশন ও সদস্যদের কোনো কিছু না জানিয়ে নিজের মত করে কাগজপত্র তৈরী করে আত্মসাত করেছেন।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন সকল হাট-বাজার নাম মাত্র টাকায় ইজারা দেখিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনদের ইজারা দিয়েছেন। এসব নিয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সদস্যদের সঙ্গে অশালিন আচরণসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ঠা মে বুধবার দুপুর ১২ টায় ইউনিয়ন পরিষদে জেলেদের চাল বিতরণের অনীয়মের প্রতিবাদ করায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খোকন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মান্নানকে শত শত মানুষের সামনে চেয়ারম্যান অশালিন ভাষায় গালাগাল করে ধাক্কা দিয়ে পরিষদ চত্বর থেকে বের করে দেয়। এবং ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হুমকি দিয়ে তাদেরকে বিকাল ৪টার মধ্যে সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন।
তিনি আরও জানান, ইউপি সদস্যদের পরিষদে বসার জন্য সরকারী চেয়ারগুলোও একটি রুমে তালাবদ্ধ রেখেছেন চেয়ারম্যান।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সামনের জামিতে কোনো প্রকার রেজুলেশন ছাড়া তিনটি ঘর নির্মাণ করে তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে দখল বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়া আত্মসাত করে আসছেন তিনি। চেয়ারম্যান তার স্বাক্ষরিত অলিখিত নাগরিকত্ব সনদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দিয়ে থাকেন। একাধিক নারীকে ত্রান দেওয়ার বিনিময়ে শ্লীলতাহানী ও কু-প্রস্তাব দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
একবার এক নারী ত্রাণের জন্য আসলে তাকে চেয়ারম্যান রাত ৯টার দিকে তার পার্সোনাল রুমে আসতে বলে। বিষয়টি ওই নারী দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ ও চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার তালিকা ইউপি সদস্যদের বাদ দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে তালিকা করে তা জমা দিয়েছেন। তারা আরো জানান, চেয়ারম্যানের এসকল অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে ইউনিয়নের সাধারন জনগণ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা চেয়ারম্যানের এসকল দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা সকল ইউপি সদস্যবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি অভিযোগ দিয়েছি। যার তদন্ত হয়েছে। তবে এখনও রিপোর্ট আসেনি। এর প্রেক্ষিতে গত ৩ জুন বুধবার আমরা সকল সদস্য মিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অনাস্থা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের সকল অভিযোগ মিথ্যা। এছাড়াও তাকে সমাজে হেনাস্থা করার জন্য তারা এসব করে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, ইউপি সদস্যরা ষড়যন্ত্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অনাস্থা দিয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, চেয়ারম্যানের বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত চলছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও অনাস্থার বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি।