|| হাসানুজ্জামান,মেহেরপুর থেকে ||
মঞ্জুরী পাল। বংশ পরম্পরায় পেশা আর নেশা যাই বলি না কেনো মাটির জিনিসপত্র বানানোই তাদের কাজ। মা-বাবার কাজ দেখতে দেখতেই কিশোর মনের অজান্তেই এই কুমোর জীবনে জড়িয়ে গেছেন মঞ্জুরী পাল। স্বামীর সংসারে এসেও সেই একই কাজ। রাত দিন কাদামাটির কাজ করে যেন হয়ে গেছেন মাটির মানুষ।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-02-300x204.jpg?resize=940%2C639&ssl=1)
সংসারে এক মেয়ে ২ ছেলে। জমি নেই। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করানোর বিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে। আর বড় ছেলে এম এ পাশ করে চাকরি করছেন একটি বেসরকারী সংস্থায়। ছোট ছেলে পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে।
অন্য ব্যবসা করার মতো টাকা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ পেশায় জড়িয়েছেন নিজেকে। শুধু মঞ্জুরী পালই নন, তার মতো গাংনীর আমতৈল গ্রামের শত কুমোর পরিবার দিনরাত পরিশ্রম করেও মুক্ত হতে পারছেন না দারিদ্রের কষাঘাত থেকে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে আমতৈল গ্রাম। গ্রামের ২৭টি পালবাড়িতে চলে মৃৎশিল্পের কাজ। নারী- পুরুষ সবারই কাদামাটির গন্ধমাখা শরীর। একসময় এদের নিপুন হাতের শিল্পকর্মে তকতকে কাদামাটি হয়ে ওঠে নিত্য ব্যবহার্য বাসনপত্র, ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিস। বেশ কদরও ছিল এসব জিনিষের।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-03-300x194.jpg?resize=871%2C563&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-03-300x194.jpg?resize=871%2C563&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-03-300x194.jpg?resize=871%2C563&ssl=1)
এনামেল ও প্লাস্টিকের তৈরী জিনিষের কদর বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরী জিনিষের এখন আর সেই কদর নেই। তাই অন্য প্রয়োজন আর বাজার ধরতে এখন তারা তৈরি করছেন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য মাটির পাট। জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব পাট যাচ্ছে বিভিন্ন জেলাতে।
একদিকে মাটি ও আনুষাঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে । অন্যদিকে প্লাস্টিকের চমকপ্রদ দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুন শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিষের কদর কমে গেছে। ফলে দৈন্যদশা ছাড়ছে না কুমোরদের। স্বল্পসুদে ঋণ পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন শতাধিক কুমোর পরিবার।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-01-300x164.jpg?resize=988%2C540&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-01-300x164.jpg?resize=988%2C540&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/02/Gangni-01-300x164.jpg?resize=988%2C540&ssl=1)
কুমোর স্বপন জানান, আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০০ টাকা। জ্বালানির দামও বেড়ে গেছে। এছাড়া কারখানা গড়তেও লাগে জমি। নিজেদের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় কারখানার জমি লিজ নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এক বিঘা জমি লিজ নিতে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক কুমোর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে এমন কোন টাকা থাকে না যা দিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করবেন। সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে সকলেই স্বাবলম্বী হতে পারতো। একই কথা জানালেন মঞ্জুরী বালা পাল।
গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজি আবুল মনসুর জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য সরকার দুটি কর্মসুচী চালু করেছেন। একটি ভাতা কর্মসুচী অন্যটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। কুমোররা যদি ঋণের জন্য আবেদন করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।