ভালুকায় সরকারি বন উজার হচ্ছে অবৈধ করাতকলে

|| উপজেলা প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ) ||

বন সংরক্ষণ আইনে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত কল থাকতে পারবে না বলা হলেও ভালুকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশপাশেই রয়েছে অনেক করাতকল। রাষ্ট্রিয় অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এসব করাত কলে চেড়াই হচ্ছে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানসহ আশপাশের বিভিন্ন বনের আকাশমনি ও গজারি গাছ।

কাদিগড় বন থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে কাচিনা বাজার, পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজারেই রয়েছে ১০ থেকে ১২টি করাতকল। অনুমোদনহীন এসব কলে দিনরাত চলছে শাল-গজারী ও আকাশ মনি বাগান কাঠ চেরাইয়ের কাজ।

করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে এসব করাত কলে দিনে আকাশমনি গাছ চেরাই করা হলেও রাতে চেরাই হয় অবৈধভাবে আনা গজারী গাছ। নাম জানাতে অনিচ্ছুক একজন করাতকল মিস্ত্রি জানান, স্থানীয় বন বিভাগকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই এসব অবৈধ করাত কলগুলো চলছে। উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বাটাজোর এলাকায় রাতের আঁধারে নিয়মিত গজারি গাছ চেরা হচ্ছে জাহাঙ্গীর মেম্বারের করাত কলে। এ ছাড়াও কাচিনা, হবিরবাড়ী, কাশর চৌরাস্তা ও মল্লিকবাড়ী বাজারের আশপাশে ২৫ থেকে ৩০টি করাতকল চলছে লাইসেন্সছাড়া। এগুলোতে দিনেরাত চেরা হচ্ছে শাল-গজারি ও বাগান কাঠ। উজার হচ্ছে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের শাল-গজারি বন।

কাদিগড় বনবিট অফিস থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজারে সেলিম তালুকদার, ইমরুল তালুকদার, আতিক মন্ডল, পলাশ তালুকদার, নয়ন মিয়া, জাহাঙ্গীর মেম্বারসহ প্রভাবশালীদের ১২ থেকে ১৩টি করাত কলে বনের গাছ চেরা হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তামাট বাজারে রফিক মিয়া সহ অন্যরা চালাচ্ছেন দুই থেকে তিনটি তিনটি করাতকল।

এদেরই একজন করাতকল মালিক বললেন, তারা বছরের পর বছর ধরে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের যানেজ করেই করাতকল চালাচ্ছেন । বাটাজোর বাজার করাতকল মালিকদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজের ফার্নিচারের দোকান।

এ নিয়ে কাদিগড় বিট কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাটাজোর এলাকা যে ১৩টি করাতকল রয়েছে এগুলোর সবক’টির মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা লাইসেন্সের কোন তোয়াক্কা না করেই বছরের পর বছর ধরে এসব করাতকল চালিয়ে আসছেন। কিছুদিন আগে দু’টি করাতকল মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান আশরাফুল ইসলাম। তবে এসব করাতকলে সংরক্ষিত বনের গাছ চেরাই হয় কিনা সে সম্পর্কে কিছু বলতে রাজী হননি এই বন কর্মকর্তা।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা যদি গজারি কাঠ চেরাই হয় এবং তার সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে বন আইনে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, বন সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যে করাত কলগুলো রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইগত ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর যাদের লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ তাদের বিরুদ্ধে মিল বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, সরকারের জলবায়ু, বন ও পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জাতীয় উদ্যানের ক্ষতি করে চলেছে এসব অবৈধ করাত কল মালিকরা। বন রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ চাইছেন তারা।#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন