|| বার্তা সারাবেলা ||
মহেশ দারোগার মুণ্ডুটা কেটে হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে মিছিল এগোচ্ছিলো৷ দিঘি থানার দুজন কনস্টেবলসহ ১৭জন ‘দিকু’কে হত্যা করে মিছিল এগোচ্ছিলো৷ পরাধীন ভারতের সেটাই ছিল প্রথম দীর্ঘ পদযাত্রা৷ ভগনাডিহি থেকে কলকাতা৷ একালের সবচেয়ে দীর্ঘ লংমার্চ৷ ব্রিটিশদের দেওয়া হিসাবেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৩০হাজার৷
ভূমিজ কুড়মী, কড়া, মুন্ডা, মাহালি, খেড়িয়া, কামার, কুমোর, তাঁতী কে থাকে নি ওই মিছিলে? নেতৃত্বে ছিলেন সিধু,কানু, চাঁদ, ভৈরো সহ খেরওয়াল বীরহড়’রা৷ দাবী ছিল-
কোম্পানীর শাসনের নামে শোষন বন্ধ করো৷
দেশী জমিদার মহাজনী শোষন বন্ধ করো৷
ছোটনাগপুর মালভূমি তথা জঙ্গলমহল থেকে বহিরাগতরা বহিষ্কৃত হও৷
এখন থেকে কেউ জমির কোনো খাজনা দেবেন না
প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে।
সাঁওতালদের সব ঋণ এখন বাতিল করতে হবে।
সাঁওতালদের মুলুকে দখল করে তাদের নিজ সরকার গড়তে দিতে হবে।
শাল ডাল-এর আমন্ত্রণে খেরওয়াল হড় আর খরখইস্যা মানুষে সেদিন ভরে গিয়েছিল ভাগনাডিহির মাঠ৷ ব্রিটিশ শাসনে সেটাই ছিল ব্রিটিশ বিরোধী সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ৷
আওয়াজ উঠেছিল হুল হু– ল হু- – -ল ৷ অর্থাৎ ‘বিদ্রোহ’৷ সাঁওতাল বিদ্রোহ৷ ১৮৫৫ আজকের দিন ৩০শে জুন সেই বিদ্রোহের দিন৷ চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম গেরিলা সংগ্রাম৷ ১৮৫৫এর সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম৷ আর এই বিদ্রোহকে দমন করতে এদেশে প্রথম জারি করা হয়েছিল সামরিক আইন (১৮০৪,১০নং রেগুলেশন ৩ধারা)৷
রিজলি হান্টারদের মতে বিদ্রোহের এক বছর সময়কালে ১৫ থেকে ২০ হাজার বিদ্রোহী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিল৷ বেসরকারীমতে সংখ্যাটা আরও বেশী৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এটাও একটা দৃষ্টান্ত৷

সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সেদিনের দেশপ্রেমিক সংগ্রাম, আদর্শ ও অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জুগিয়েছিল সাহস ও উদ্দীপনা। মুক্তিকামী মানুষের কাছে আজও তা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই—সিধু মুরমু ও কানু মুরমু স্মরণে ও শ্রদ্ধায় সাঁওতালদের অনেকেই দিনটিকে সিধু-কানু দিবস বলে থাকেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের এ দেশীয় দালাল সামন্ত জমিদার, সুদখোর, তাদের লাঠিয়াল বাহিনী, দারোগা-পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব—এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়ান সাঁওতালরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই বোন ফুলোমনি মুরমু ও ঝালোমনি মুরমু।
ভারতের ভাগলপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকা দামিন-ই-কোহ্ বা ‘পাহাড়ের ওড়না’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ভাগলপুরের ভগনা ডিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব—এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে দামিন-ই-কোহ্ অঞ্চলে সংঘটিত হয় সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন ভগনা ডিহি গ্রামে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষকের বিরাট জমায়েত হয়। এই জমায়েতে সিধু-কানু ভাষণ দেন।
এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অত্যাচারী শোষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। এখন থেকে কেউ জমির কোনো খাজনা দেবেন না এবং প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে। আর সাঁওতালদের সব ঋণ এখন বাতিল হবে। তাঁরা মুলুক দখল করে নিজেদের সরকার কায়েম করবেন।
সাঁওতাল কৃষকরা সেদিন শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন। ভগনা ডিহি গ্রামের ওই সভার শপথ ছিল বিদ্রোহের শপথ। বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল ‘জমি চাই, মুক্তি চাই’। জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও জুলুম থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির সঙ্গে উৎপাদনের কাজ ও জীবন ধারণ করার সংকল্প নিয়ে সাঁওতাল কৃষকেরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ান। তাঁদের এ বিদ্রোহের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার শোষিত, বঞ্চিত বাঙালি ও বিহারি হিন্দু-মুসলমান গরিব কৃষক এবং কারিগরেরা। সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়ে উঠেছিল সব সম্প্রদায়ের গরিব জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধ।
প্রতিবছর এই দিনে সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি, শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ও বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ ও দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সিধু-কানুসহ সব আত্মদানকারীকে। উদযাপন করে থাকে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস।



এবারও বিদ্রোহের ১৬৫তম বার্ষিকীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী সাংস্কৃতিক পরিষদ, আদিবাসী নারী পরিষদ, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, আদিবাসী মুক্তি মোর্চা, নাচোল আদিবাসী একাডেমি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), নওগাঁ জেলা শাখা বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থানে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন করছে।
এ ছাড়া সাওতাল গানের দল সেঙ্গেল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্রোহ দিবসের ওপর আলোচনা ও গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অংশ নিচ্ছেন ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সাঁওতাল সাংস্কৃতিক নেতারা।
সাধারণ নিরক্ষর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস না জানলেও বংশপরম্পরায় তাঁদের কাছে গানে গানে বেঁচে আছেন সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়কেরা। সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসে তাঁদের আজও গাইতে শোনা যায়, ‘সিদো-কানহু খুড়খুড়ি ভিতরে চাঁদ-ভায়রো ঘোড়া উপরে দেখ সে রে! চাঁদরে! ভায়রো রে! খোড়া ভায়য়োরে মুলিনে মুলিনে।’
সিধু-কানু পালকিতে এবং চাঁদ-ভৈরব ঘোড়ায় চড়ে বিদ্রোহীদের পাশে থেকে তাঁদের উৎসাহ দিতেন। নেতাদের কাছে পেয়ে বিদ্রোহীদের মনে যে আনন্দ ও আশার আলো দেখা দিত, তারই প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় এই গানে।
আজ সেই হুল দিবস৷ সামিয়ানা টাঙিয়ে নাচাগানা করে হুলকে পরব কিম্বা উৎসব হিসেবে উদযাপনের দিন নয়৷ সেই খেরওয়াল বীরহড়’দের বীরত্বকে সম্মান জানানোর দিন৷ তাদের অসমাপ্ত কাজকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার দিন ‘হুলমাহা জিতকার’৷
৯ thoughts on “ভগনাডিহি থেকে কলকাতা সাঁওতাল বিদ্রোহ বিস্তৃতি পায় সারাবাংলায়”
Ⅿay I just say what a comfort to find an ihdividuɑl who truly
undеrstands ԝhat they are discussing online.
You definitely knoѡ һow t᧐ bring a problem tߋ ligvht aand make iit important.
A lot more ⲣeople must read this and understand this side of your story.
I waas surprised that you’re not more popular since you mоst certainly posess the gift.
You can also send/receive funds by employing the ACH or bank transfer.
I rеad this piece of writіng fully on the toic of the compariѕon oof hottest and preceding technologies,
it’s awesߋme article.
Good ԁay! Do you know if they mɑқe any plugins to protect agɑinst hackers?
I’m kinda paranoid about losing everything I’ve worked
hard on. Any tips?
Pгetty niсe post. I simply stumbled upon your blog and wisһed to menti᧐n that I
have trulү lovved browsing your weblog posts. After all I will be subscribing too youг feed and
I am hoping you write once more soon!
Ι visited several sitеs but the audio feɑture for audio songs present
at thiѕ ᴡeЬsite is in fact superƅ.
Heya i am for the first time here. I found this board and I find It really useful &
it helped me out much. I am hoping to provide one thing again and help others
such as you aided me.
Hi there it’s me, I am also visiting this website regularly, this web site is
truly good and the people are genuinely sharing fastidious thoughts.
Hey there great bⅼog! Does running a blog ѕսch as
this take a mɑsѕive amount work? I have verу іttle knowledge of coding howevr Ӏ
was hoping t᧐ start my own blog in the near future.
Anyway, should you have any idеas or techniques for new blog ⲟwners pleasе share.
I knjow this is off subject nevеrtһeless I just wanted to ask.
Many thanks!