|| সাদ্দাম হোসাইন, টেকনাফ থেকে ||
কক্সবাজারের টেকনাফে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়া পাহাড়ি ছড়া এবং জোয়ার-ভাটা রয়েছে এমনসব খাল জবরদখল হয়ে পড়ায় চাষাবাদের সেচে সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। এসব ছড়া ও খাল সংস্কার বা খনন না করায় বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শংকা তৈরি হয়েছে। তাই জবরদখল হয়ে যাওয়া পাহাড়ি ছড়া ও খালসমুহ দখলমুক্ত করে সংস্কার করলে পুরো এলাকার ২ হাজার ২শ ৫ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩৮৮ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের টেকনাফে আবাদযোগ্য ১৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর জমির মধ্যে ১১ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে আসছে। ৩৬টি গভীর ও অগভীর নলকূপের সেচপাম্প এবং ২৪০টি পাম্প মেশিনসহ বিকল্প উপায়ে সেচ দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদ করছেন।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-4-31-01-21-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
উপজেলা জুড়ে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী খাল, ঘিলাতলী খাল, উলুবনিয়া খাল, লাতুরীখোলা খাল, লম্বাঘোনা খাল, লম্বাবিল খাল, রইক্ষ্যং খাল, কানজরপাড়া খাল, ঝিমংখালী খাল, সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, পূর্ব সাতঘড়িয়া পাড়া খাল, নয়াবাজার চাঙ্গিরী খাল, কম্বনিয়া খাল এবং পাহাড়ি কেরুনতলী ছড়া,মিজ্জির ছড়া, আমতলী ঘোনার ছড়া, লম্বাবিল ছড়া, শুকনা আমতলী ছড়া, ছোট মুখের ঢালার ছড়া, জোয়ারী খোলা ছড়া, কাঁটাখালী চাকমাপাড়া ছড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের রোজারঘোনা খাল, নাইক্যংখালী খাল, ওয়াব্রাং খাল, পানখালী খাল, উলুচামরী খাল, রঙ্গিখালী খাল, আলীখালী খাল, ছ্যুরিখাল, জাইল্যাঘাটা খাল, ওমর খাল, দমদমিয়া খাল, চেকপোষ্ট খাল, ১৪নম্বর ব্রীজ সংলগ্ন খাল এবং উলুচামরী হামজার ছড়া,উলুচামরী পানির ছড়া, কেয়ারী ঘাট ছড়া, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হেচ্ছার খাল, হাবিরছড়া খাল, নেটং খাল এবং রাজারছড়া, মিঠাপানির ছড়া, বরইতলী ছড়া, নাইট্যং পাড়া ছড়া, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ বড় খাল, ১নম্বর ও ২নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খাল, সাবরাং খাল এবং আলীর ডেইল ছড়া,বাহারছড়ার মনখালী খাল, শিলখালী খাল, জাহাজপুরা বড় খাল, হাজম পাড়া খাল,শীলখালী ও বড়শীল খালী খাল, তারের ছড়া খাল, কাদুরার ছড়া খাল, রাইল্যা ছরা খাল, মরিচ্যা ছরা খাল এবং রকিম্মার ছড়া, বালাইর ছড়া, পুরানপাড়া ছড়া, বাঘঘোনা ছড়া, ডাকছড়া, মাথাভঙ্গা ছড়া, বাইন্যাপাড়া ছড়া, জাহাজপুরা ছড়া, টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুক খালী খাল, গোদারবিল খাল এবং নাইট্যংপাড়া ছড়াসহ মোট ৪৫টি খাল এবং ২৫টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-2-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-2-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-2-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
এসব খাল ও পাহাড়ি ছড়া উদ্ধার, প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার প্রভাবশালী, জনপ্রতিপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা জবরদখলে নেওয়া এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় পুরো এলাকাকে চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিতে খাল ভরাট হয়ে গেলেও খননের উদ্যোগ না থাকায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে তা ক্রমান্বয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র খাল ও পাহাড়ি ছড়া দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে বেশীর ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, বেদখল হয়ে যাওয়া খাল এবং মরে যাওয়া পাহাড়ি ছড়া সমুহ সংস্কার হলে আরো বিশাল জায়গা চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে। খাদ্য শস্যের সরবরাহ বাড়বে। অনেকে এসব ছড়ায় চাষাবাদের পাশাপাশি মৌসুমী মৎস্য চাষও করতে পারবেন।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-3-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-3-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-3-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
এই বিষয়ে হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, খাল সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক চাষাবাদ বাড়াতে এসব খাল ও ছড়া উদ্ধার করে সংস্কার করতেই হবে। মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে মৃত এসব খাল ও পাহাড়ি ছড়া সচল করলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এজন্য তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা পলিমাটিতে খাল ও পাহাড়ি ছড়াসমুহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় নিয়মিত মৌসুমী চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এসব খাল উদ্ধার ও ছড়াগুলোর নিয়মিত সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাসমুহের কাছি দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানানো হচ্ছে। তিনি জানান, পাহাড়ের ভেতরে বাহাতি ছড়া নামে একটি বড় ধরনের পানির আধার রয়েছে। সেটি সংস্কার করে মুখ পরিবর্তন করে দিলে হাজার হাজার একর জমি চাষের আওতায় আনা যাবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও খাবার পানি সরবরাহ করা যাবে বলেও জানান তিনি।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-5-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-5-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-5-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন জানান, বাহারছড়ায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে এরকম বেশ কয়েকটি খাল রয়েছে। মেরিন ড্রাইভ হওয়ার পর কিছু খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে মাথাভাঙ্গার ফজল মার্কেটের উত্তর পাশ হয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি খালটি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেটি সংস্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু কিছু ছোট ছড়ায় পানি চলাচলের সুবিধার্থে সেতু ও কালভার্ট করা হয়েছে। তিনি এও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষির উন্নয়ন করতে ভরে যাওয়া ছড়াগুলো সংস্কার করা গেলে এলাকাবাসী পানির সংকট থেকে মুক্তি পাবে, ক্ষেতে পানি সেচেরও সুবিধা হবে।
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-6-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-6-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2021/01/Teknaf-Pic-A-6-300x150.jpg?resize=1200%2C600&ssl=1)
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ডঃ ভবসিন্ধু রায় জানান, অত্র উপজেলার জবরদখল ও ভরাট হওয়া খাল এবং পাহাড়ি ছড়াগুলো উদ্ধার করে সংস্কার করলে বাড়বে পানির প্রবাহ। অনেক জমি চাষাবাদের আওতায়। এতে স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়বে। বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন মহল গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলেও আশা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, জনস্বার্থে বেদখল হয়ে খাল ও পাহাড়ি ছড়াগুলো উদ্ধার করা হবে। এসব খাল ও ছড়া সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন মহলকে জরুরীভিত্তিতে জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।