বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে চিরবিদায় জানালো টেকনাফবাসী

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির দিশারি সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আর নেই। সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসা এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে চির বিদায় জানালো উপজেলার মানুষ।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার) ||

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির দিশারি সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আর নেই। সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসা এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে চির বিদায় জানালো উপজেলার মানুষ।

শুক্রবার ১৩ই নভেম্বর ভোররাত পৌণে চারটার দিকে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নিজ বাড়িতেই মারা যান। ৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী স্ত্রী, ৩ ছেলে,১ মেয়ে, নাত-নাতিনী, আত্মীয়-স্বজন, ও অসংখ্য রাজনৈতিক সহকর্মী, শুভাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

বাদ আসর হ্নীলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টক ইয়ার্ড মাঠে নামাজে জানাজার আগে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই নেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম, আলহাজ্ব শফিক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র মাহবুব মোরশেদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক এইচ এম ইউনুছ বাঙ্গালী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুল বশর, যুগ্নসাধারণ সম্পাদক সেলিম সিকদার, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া যুবলীগের সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ, সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রমুুখ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক রাজা শাহ আলম, সদস্য ও সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম, হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব সোনা আলী, টেকনাফ উপজেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জহির আহমদ প্রমুখ।

এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন ও পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে সম্মান জানানো হয় বীর এই মুক্তিসেনাকে। জানাজা শেষে দরগাহ গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এই রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে উখিয়া-টেকনাফ তথা জেলাবাসী একজন প্রকৃত জনদরদী এবং প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাকে হারালেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে তিনি ব্যথা ও ডায়াবেটিসজনিত রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। শুক্রবার ভোররাতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করার পরপরই তিনি মারা যান।

মোহাম্মদ আলী ১৯৪৭ সালের পয়লা এপ্রিল উপজেলার হ্নীলা ফুলের ডেইল গ্রামে মরহুম আমির হোসেন ও মরহুমা সুফিয়া খাতুনের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হ্নীলা প্রাইমারী, চকরিয়া হাইস্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজের গন্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি আওয়ামী আদর্শের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তির পক্ষে জনমত গড়ে তুললে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের রোষানলে পড়েন। পাকবাহিনী তাঁকে প্রাণে মারার জন্য ষড়যন্ত্র করলে তিনি কিছুদিনের জন্য পাশের দেশ মিয়ানমারে আশ্রয় নেয়। এরপর পাকবাহিনী ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মনে করে হ্নীলা ফুলের ডেইলের মৃত ছমি উদ্দিনের ছেলে ডা. মোহাম্মদ আলীকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনেক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। তিনি ওপারে ক্ষণিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে সার্বিক সহায়তা করেন।

যুদ্ধশেষে স্বাধীন দেশে তিনি কক্সবাজার সরকারী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর দেশে দলটি দূরাবস্থার সম্মুখীন হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর দেশের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তিনি আবারো অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে টেকনাফে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরেন। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের সমর্থনে ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। একাধারে তিনি ১৯৯৬সালের ১২ই জুন পর্যন্ত টানা ৩ বার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১সালে উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ১৯৯৬ সালে তিনি কক্সবাজার তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি ৩ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন।

তিনি বিভিন্ন আসময়ে পর্যায়ক্রমে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, যুগ্ম আহবয়ক, সহসভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং মৃত্যুবরণকাল পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আলী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন