বাগেরহাটে বালুখেকোদের দাপটে ভাঙছে সড়ক যানবন্ধে বেড়েছে জনদুর্ভোগ

বাগেরহাটের চিতলমারীতে পাশের খাল থেকে বালু তোলায় নালুয়া-ভোলা সড়কের কয়েকশ ফুট ধ্বসে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও আধা কিলোমিটার সড়ক। চিতলমারী উপজেলার গুরুত্বপূর্ন এই সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় বেড়েছে জনদূর্ভোগ।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ||

বাগেরহাটের চিতলমারীতে পাশের খাল থেকে বালু তোলায় নালুয়া-ভোলা সড়কের কয়েকশ ফুট ধ্বসে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও আধা কিলোমিটার সড়ক। চিতলমারী উপজেলার গুরুত্বপূর্ন এই সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় বেড়েছে জনদূর্ভোগ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভ্যান, অটো, বাইসাকেল ও মটর সাইকেল। বন্ধ রয়েছে বড় যানবাহন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান সড়কের পাশের খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় রাস্তার এই অবস্থা। বালু তোলায় ব্যবহৃত দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান বালু তোলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

স্থানীয়রা জানান, ৪ কিলোমিটারের নালুয়া-ভোলা সড়কটির পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া হক ক্যানেল (কাটাখাল)। এই ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়। বালু তোলায় ক্যানেলের গভীরতা বাড়ায় শুক্রবার সড়কের বড়বাড়িয়া মোহাম্মাদ আলীর বাড়ির সামনের অংশে ফাটল দেখা দেয়। রাস্তার অর্ধেক জুড়ে প্রায় দেড়শ থেকে দু‘শ ফুট ক্যানেলের পাশ থেকে ধ্বসে গেছে। এতে ওই স্থান থেকে বড় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মারত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক।

অন্যদিকে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি এসকেভটর দিয়ে খনন করেছে। সড়কের কোল ঘেষে এসকেভেটর দিয়ে খনন করাতেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। এভাবে চলতে থাকলে এবং খালের পানি আরও কমলে সম্পূর্ণ রাস্তা ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। দ্রুত এসব অপতৎপরতা বন্ধ করে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সড়ক সংলগ্ন গোলা এলাকার লিটন শেখ বলেন, আমার বাড়ির সামনের খাল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদ সরদার ইতোমধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকার বালু বিক্রি করেছেন। গোলা কবর স্থান, রবিউলসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বালু বিক্রি করেছেন চেয়ারম্যান। বালু তোলায় রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। রাস্তা ভেঙ্গে গেলে আমার বাড়িও বিলীন হবে এই খালে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কায়েম আলীসহ স্থানীয় অনেকেই বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান এই খালে ড্রেজার বসিয়ে বালু উঠিয়ে বিভিন্ন লোক ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন। বারবার নিষেধ করা হলেও তিনি কোন তোয়াক্কা করেননি। মোহাম্মাদ আলীর বাড়ির সামনে থেকে ধ্বসের ফলে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ভ্যান ও অটোতে যারা চলছে তারাও এক ধরণের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। গত রাতেও একটি অটো উল্টে এক শিশু ও তার মা আহত হয়েছেন।

চিতলমারী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলেনা পারভীন বলেন, রাস্তাটি ধ্বসের ফলে জনগনের দুর্ভোগ বেড়েছে। যাদের বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেরা কামাল স্বপ্না বলেন, আমরা সড়কটি দেখে এসেছি। এখানে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত না। যারা বালু উত্তোলন করেছেন তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও খাল খননের ফলে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি সড়কটি দেখেছি। ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত দুটি ড্রেজার মেশিন ও আনুসঙ্গিক মালামাল জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু ওই ড্রেজার মেশিনের কোন মালিক পাওয়া যায়নি। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের জন্য এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা হয়েছে।

সংবাদ সারাদিন