বন্যা যেনো ছাড়ছেই না কুড়িগ্রামের মানুষকে

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||

অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে আবারো উপচে পড়ছে কুড়িগ্রামের ছোটবড় সবগুলো নদনদীর পানি। জেলার নদী তীরের অনেক জনপদ তলিয়ে গেছে নতুন করে আসা বানের পানিতে। ডুবে গেছে ফসল। পঞ্চম দফা এই বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার পঞ্চাশেক মানুষ। দুর্ভোগ আর রোগশোকে বিপর্যস্ত মানুষ যেনো মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। তবে তা একটু কমে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদৎসীমার ওপরেই বইছে। সেইসাথে তিস্তাসহ অন্যান্য সকল নদ নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।

চতুর্থ দফা বন্যার পানি কমে গেলেও আবার গত দুইদিন ধরে পানি বাড়ায় নতুন করে ৫ম দফা বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে জেলার সদর, রাজারহাট, উলিপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ ৪টি উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল।

এসব এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের নৌকা ও কলার গাছের ভেলায় চরে এখন চলতে হচ্ছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে প্রায় ৫হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল। বিশেষ করে সদ্য রোপিত আমন ধানেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি।

৫ম দফা বন্যা পরিস্থিতিতে যার পর নাই বিপর্যস্ত নদী পাড়ের মানুষ।

সদর উপজেলার কদমতলা গ্রামের কৃষক সামাদ মিয়া জানান, ‍“কয়বার আর জমি গাড়মো। এইতো সেদিন লালমনিরহাট থাকি বিচন আনি রোয়া গাড়নো। ফির বান আসি ডুবি দিলে। তাহলে হামরা কৃষক মানুষ বাচমো ক্যামনে।”

কৃষিবিভাগের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত চতুর্থ দফা বন্যায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। তবে আরো জমির ফসল তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে বন্যার পানি বাড়া-কমার মধ্যেই জেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুরু হয়েছে ভাঙন। জেলার ৫টি উপজেলায় অন্তত ৩০টি পয়েন্টে নদী ভাঙন তীব্র আকার নিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলী জমিসহ নানা স্থাপনা প্রতিদিন নদীতে চলে যাচ্ছে। গৃহহীন হয়ে পড়ছে শতশত মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকটি পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ মে. টন চাল ৩ উপজেলায় দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যার চেয়ে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

যদিও ভাঙনবিপর্যস্ত মানুষ ত্রাণ চাননা। তারা চান দ্রুততম সময়ে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা।

বন্যা ও ভাঙ্গনবিপর্যস্ত মানুষদেরকে রাষ্ট্রিয় সহায়তা দেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক।
ছবি: সংবাদ সারাবেলা

কুড়িগ্রামের সব নদ নদীতে ড্রেজিং শুরু হবে শিগগিরই

এদিকে বন্যার প্রকোপ ঠেকাতে কুড়িগ্রামের সব নদনদীতে শিগগিরই ড্রেজিং শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক। তিনি বলেছেন, “আমরা দশ বছর আগে কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এত স্বাবলম্বী ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন অবস্থাতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন আমরা চিন্তা করতে পারি এখানে বাঁধ দেয়া হোক, ওখানে রিভার প্রোটেকশন দেয়া হোক, কিংবা ড্রেজিং করা হোক। দশ বছর আগে কিন্তু এ চিন্তা আমরা করতে পারতাম না। আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে এখন অনেক উন্নয়ন। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নদীতে এসব করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে টাকা কোন সমস্যা না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে গেলে একটু সময় দিতে হবে। এবার করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী জনগনের মুখে হাসি ফোটাতে দুই হাতে টাকা দিয়েছেন।”

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদীভাঙন এলাকা দেখতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বন্যা ও নদী ভাঙনের ক্ষতি কমিয়ে নিতে ড্রেজিংসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

তিস্তায় চীনের প্রস্তাবিত প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২১টি প্রকল্প নিয়ে ডোনারদের সাথে কথা বলেছি। এর মধ্যে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও এতে সম্মতি জানিয়েছি। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি সদর উপজেলার মোগলবাসা ঘাট এলাকায় ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধিসহ বন্যা ও নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী ও বীজ বিতরণ করেন।

এসময় কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাংসদ পনির উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাংসদ আছলাম হোসেন সওদাগর, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম, মহাপরিচালক এ এম আমিনুল হক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান, নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান সাজু প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন