বগুড়া থেকে বরিশালে বেড়াতে এনে হত্যা করে স্ত্রীর লাশ গুম

ঘটনার বিস্তারিত জানতে সাকিবকে নিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে মঙ্গলবার দিনভর অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় সাকিবের বাবা ভ্যানচালক আবদুল করিম হাওলাদারের ভাড়াটিয়া বাসার সেফটি ট্যাংক থেকে খুনের আলমত উদ্ধার করা হয়।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গৌরনদী (বরিশাল) ||

বগুড়ার এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাকে বরিশালে বেড়াতে এনে খুন ও লাশ গুমের অভিযোগ উঠেছে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার যুবক সাকিব হোসেন হাওলাদারের ‍বিরুদ্ধে। নিহত নাজনিন আক্তার (১৮) বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের ছাত্রী। নাজনিনকে খুন করে লাশ গুমের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সাকিব। সে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করছেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে সাকিবকে নিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে মঙ্গলবার দিনভর অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় সাকিবের বাবা ভ্যানচালক আবদুল করিম হাওলাদারের ভাড়াটিয়া বাসার সেফটি ট্যাংক থেকে খুনের আলমত উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজনিন আক্তারের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের আবদুল করিম হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন হাওলাদারের।
বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয়ের একপর্যায়ে গত বছর ৩০শে সেপ্টেম্বর সাকিব হোসেন ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজ ছাত্রী নাজনিনকে বিয়ে করে।

কলেজ ছাত্রী নাজনিন আক্তারের ভাই আ. আহাদ প্রামাণীক বলেন, গত ২৪শে মে তার ভগ্নিপতি সাকিব হোসেন হাওলাদার তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে আমার বোনকে নিয়ে বরিশালে যান। পরবর্তীতে তাদের মুঠো ফোন বন্ধ ও কোন প্রকার যোগাযোগ না থাকায় গত ২৬শে মে আমার বাবা আব্দুল লতিফ বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি ও সেনানিবাসে অভিযোগ দায়ের করেন।


ঘাতক সাকিব হোসেন হাওলাদার বলেন, বিয়ের পর একাধিকবার আমি আমার শ্বশুরবাড়ি বগুড়া সদর থানার সাপগ্রামে বেড়াতে যাই। আমার বাবার অসুস্থতার কথা বলে গৌরনদী বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে বাবার ভাড়াটিয়া সালাউদ্দিনের বাড়িতে গত ২৪শে মে রাত ৯টার দিকে নিয়ে আসি। এ সময় আমার বাবা-মা কেউই বাসায় ছিলনা। নানা বাড়ি বেড়াতে যায়। আমার স্ত্রী কাঁচা ঘর ও ল্যাট্রিন দেখে আমার সাথে ঝগড়া করে। এতে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাইরে থাকা প্লাস্টিক রশি দিয়ে গলায় ফাঁস ও বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে পাশের সেফটিক ট্যাংকে লাশ গুম করি। পরবর্তীতে আমার শ্বশুর আব্দুল লতিফ প্রামাণিক গত ২৬শে মে আমার ইউনিটে ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রক্ষিতে ইউনিট ইনচার্জ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি খুন ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করি।

গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফজাল হোসেন জানান, সাধারন ডায়েরি ও অভিযোগের সুত্র ধরে পুলিশ সাকিব হোসেন হাওলাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে নাজনিনকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে নিজেদের ভাড়াবাসায় নিয়ে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে।

গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের সহায়তা বগুড়া পুলিশ সেফটিক ট্যাংকে পাম্প দিয়ে পানি নিস্কাশন করে। ট্যাংকের মধ্যে লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াসহ ২টি নখ এবং পরিধেয় ওড়না উদ্ধার করে।

সংবাদ সারাদিন