|| সারাবেলা প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম ||
করোনদুর্যোগের মধ্যেই ফি বছরের দুর্যোগ নদী ভাঙনে ফের নি:স্ব হচ্ছেন কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেষা চারটি গ্রামের মানুষ। প্রতি বছরই নদীভাঙনে জলে চলে যায় ভিটেমাটি। আবারও ঘুরে দাঁড়ান। ফের হয়ে যান নি:স্ব। প্রকৃতির এমনি দুর্যোগঘূর্ণাবর্ত থেকে মুক্তি মেলে না নদীপাড়ের মানুষের।
ভাঙন শুরু হলে ভিটেমাটি চলে যায় নদীতে। নি:স্ব মানুষগুলোর জন্য জোটে সাময়িক সহায়তা। ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর দাবি এর স্থায়ী সমাধান। তারা চান নদী শাসনে স্থায়ী ও টেকসই বাধ। চান কাজের সুযোগ।
বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙন এলাকায় গিয়ে খাদ্যসহায়তা দেয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে। দুর্যোগগ্রস্ত মানুষগুলো এই সহায়তা নিলেও তাদের দাবি এই ভাঙনের স্থায়ী সমাধান। তারা সাময়িক এই সহায়তা আর নিতে চান না।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাতিয়ায় নদী ভাঙছে বিরামহীন। গেল কয়েকদিনের ভাঙনে ঘরবাড়ি, স্থাপনা, ও কৃষি জমির মত সব সহায় হারিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন মানুষজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি তাদের। সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছেন তারা। বিঘার পর বিঘা জমিসহ ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হচ্ছে প্রতিদিন। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/06/Kurigram-River-Erosion-2-1.jpg?w=1200&ssl=1)
হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে পালের ঘাট, নয়াদারা, নীলকণ্ঠ ও হাতিয়া গ্রামের শতশত মানুষ। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রামগুলোর প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় চলছে তীব্র ভাঙন। দুই শতাধিক ঘর-বাড়িসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও গেল ২ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩শ’ বসতবাড়ি, কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে চলে গেছে। এমনকি তাদের আবাদের বোরো ধান কাটারও সুযোগ পাননি তারা।
এদিকে, বাধের ১৭শ মিটার এলাকা বাদ দিয়ে দুই দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটার স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড। মাঝখানের এই ১৭শ মিটার এলাকা সংরক্ষণ কাজের বাইরে রাখায় ভাঙনে সর্বশান্ত হতে হচ্ছে ৪টি গ্রামের শতশত মানুষকে। কেউ কেউ দুই তিনবার পর্যন্ত ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাই নেই অনেকের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের ডানতীরে ইতোমধ্যে অনুমোদিত প্রকল্প থেকে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার স্থায়ী নদী সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন এবং ভাটিতে চিলমারীর জোড়গাছ এলাকায় ১৭৫০ মিটার গ্যাপ রয়েছে। এটাও আমরা অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকণ্ঠ গ্রামের মহুবর ও মোত্তালেব জানান, ইউনিয়নের উত্তরে পালেরঘাট এলাকার প্রফুল্ল পালের বাড়ি থেকে দক্ষিণে কলাতিপাড়া গ্রামের অপিজলের বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা এখনো ভাঙছে। এতে কয়েক মাসে নীলকণ্ঠ গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়িসহ গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এছাড়াও হাতিয়া বিল গ্রামের ৬০টি বাড়ি, রামখানার ১১টি বাড়ি, কলাতিপাড়ার ৭০টি বাড়িসহ মোট ৩৯০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
এরআগে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ঝড় ও বৃষ্টিতে নদের পানি আরো বেড়ে গেছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র আরো আগ্রাসী রুপ নিয়েছে। বারবার নদী ভাঙনের শিকার এসব নি:স্ব পরিবারের কেউ কেউ নদীর বাধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, মাঝখানে উন্মুক্ত হাতিয়া অঞ্চলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে ব্রহ্মপুত্র ডান তীর রক্ষা প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে। তিনি বলেন, দ্রুত নয়াদারা থেকে পালেরঘাট পর্যন্ত দুইশ মিটার স্থায়ী বাধ দেয়া দরকার।
স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে উলিপুর ও চিলমারী দুই উপজেলার ভাঙনরোধে চলমান প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার কাজও হুমকিতে পড়বে বলে জানান তিনি।