|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কয়েকটি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় হুমকিতে পড়েছে নদীতীরের গ্রামীণজনপদ।বালুখেকোরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেন না কেউ। এমনকি প্রশাসনও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম এবং সোনাভরি নদীতে কম করে হলেও ৩০টি ড্রেজার মেশিন দিনেয় অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। বসত ভিটা, রাস্তা, ব্লক তৈরি, স্কুল মাঠ ভরাটের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে এসব বালু। এতে উপজেলার অনেক নদীতে অসময়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকিতে পড়েছে নদীতীরের মোহনগঞ্জ, চর নেওয়াজী, কোদালকাটি, বাউল পাড়া, বালিয়ামারী, রাজিবপুর মুন্সিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।
প্রশাসনিকভাবে নিষেধ করা সত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধুমছে চালাচ্ছে বালুর ব্যাবসা। অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য দফায় দফায় রাজিবপুর উপজেলা ভুমি কমিশনার, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভূক্তভোগিরা।
ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনকারী মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের শামীম হোসেন জানান, রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকার আমাকে অনুমতি দিয়েছেন এবং তিনিই এই কার্যক্রম উদ্বোধন করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগিদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, উজ্জল হোসেন নামের এক ড্রেজার মেশিন মালিক ডাকাত দলের সদস্য। কেউ ড্রেজার সম্পর্কে কথা বলতে গেলে ডাকাতের ভয় দেখায়। ড্রেজার মালিক মতিউর রহমান বলেন, প্রশাসনকে প্রতিমাসে ২ হাজার করে টাকা দিতে হয়, টাকা দিলে সব চলে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমি উদ্বোধন করি নাই। তবে আমার একটি ড্রেজার মেশিন আছে যা দিয়ে সরকারি রাস্তার কাজ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক তৈরির কাজের জন্য বালু তোলা হচ্ছে।
এব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস জানান, আমি ড্রেজার মেশিন চালানোর কোন অনুমতি দিইনি। কয়েকদিন আগে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানকে পাঠিয়ে অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করিয়েছি। কাজের চাপে ওই এলাকায় যাওয়া হয় নাই। তবে আমি দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম নদী শাসনের কাজ পরিদর্শনে এসে কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের কিছু মালামাল জব্ধ করে নিয়ে সব ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে চলে যান। কিন্তু আবারও চালু করা হয় ওই সব ড্রেজার মেশিন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ নির্বাহী কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, কোন ড্রেজার মেশিনের অনুমতি আমি দেইনি। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ মেশিন চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম জানান, কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।