প্রতারক জেমি খাতুন আটকে সিরাজগঞ্জে স্বস্তি

ঢাকার তেজগাঁও থানায় করা প্রতারণা মামলায় গত ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল বিভাগ তাকে গ্রেফতার করার পর তার নিজ এলাকার ভুক্তভোগী অনেকেই এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন ।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ||

প্রতারনা করে নিজেকে কখনো প্রধানমন্ত্রীর কথিত মেয়ে, কখনো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বন্ধু, আবার কখনো বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারিত করে আসছিলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মেয়ে জেমি পারভীন।

দেশের বিশিষ্ট মানুষদের সাথে ছবি উঠে তা ফেসবুকে আপলোড দিয়ে নিজেকে তাদের আপনজন হিসেবে দাবি করত সে। কৌশলে এসব পরিচয় ব্যবহার করে সে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছিল। আর ফেসবুকের নিজস্ব ওয়ালে বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে কটূক্তিসহ নানা ধমক-ধামক লেখা থাকতো।

জেমির ইচ্ছেমতো না চললে এলাকার সাধারণ মানুষকে পড়তে হতো নানা ঝামেলায়। তার অপছন্দের লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা, ও অপহরণের মামলা করা হতো। তারপর এই মামলা মেটাতে অভিযুক্ত এসব লোকদের গুনতে হতো মোটা অংকের টাকা। মাঝে মাঝে তিনি নানা তদবিরের নামে অনেকের কাছ থেকেই নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। সেইসব টাকাতে জেমি ঢাকাসহ উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরের গড়ে তুলেছেন অন্তত চারটি বাড়ি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে নিজের তোলা ছবি দেখিয়ে থানার কর্মকর্তাদের তিনি প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছেন স্থানীয়দের।কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিজে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন এমন ভাবেই নিজেকে জাহির করে তার ফেসবুক ওয়ালে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নামে নানা কটুক্তি প্রচার করেছেন। কখনো কখনো অপছন্দের লোককে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন তার ফেসবুক ওয়ালে।

ঢাকার তেজগাঁও থানায় করা প্রতারণা মামলায় গত ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল বিভাগ তাকে গ্রেফতার করার পর তার নিজ এলাকার ভুক্তভোগী অনেকেই এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন ।

তবে তার মা সোনাভান বেগমের দাবি, তার মেয়ে নিরাপরাধ। মিথ্য অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় গাাদড়হ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানালেন বিগত সময়ে জেমির জন্য বেশ কয়েকটি সালিশ বৈঠক হয়েছে। তবে জেমির অধিকাংশ অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে । থানায় দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যে বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান জেমি পারভীনের বিগত সময়ের রেকর্ড যাচাই-বাছাই চলছে। তবে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জেমি পারভীনের আটকের খবরে স্বস্তির মিলেছে শাহজাদপুর এবং উল্লাপাড়া উপজেলার ভুক্তভোগিদের। ইতিমধ্যেই তার বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। ভুক্তভোগী এইসব মানুষেরা সঠিক তদন্ত করে তার বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি এলাকার মানুষেরা এখনো জেমি পারভিনকে জানে সন্দেশ ওয়ালার মেয়ে নাবিয়া খাতুন নামে। তার ছোট বেলার সময় কেটেছে তালগাছি স্কুলের সামনে তার বাবার সাথে সন্দেশ বিক্রির করে। মাঝে মাঝে নাবিয়া গান গাইতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে নাবিয়া হয়ে ওঠে জেমি পারভীন।

ইতিমধ্যেই জেমি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন চার বার । সবশেষ তিনি আস্তানা গাড়েন ঢাকায়। নিজের গাওয়া গান নিয়ে হাজির হন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। চাতুরতার সাথে সখ্য বাড়ান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে। তাদের সাথে ছবি তুলে তা ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে প্রচার করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন নারী নেত্রী হিসেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন