|| এম.এম.জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে ||
সবুজে সমৃদ্ধ মনোরম বাংলার গ্রাম। প্রকৃতির সবুজের রূপে যেনো আত্মহারা চারপাশ। কৃষকদের মনের রঙ আর শ্রমের সবুজ ফসলে সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে সাগরের প্রতিচ্ছবি সাঙ্গু নদীর তীর। স্বচ্ছ মৃদু বাতাস মন কেড়েছে অনেক প্রকৃতি প্রেমিদের। বেলা ফুরোবার আগেই একটু প্রাণ ভরে নিশ্বাস আর সাগর কন্যার রূপ উপভোগ করতে সবাই ছুটে আসে সাঙ্গুর তীরে ।
সন্ধা নামতেই যেন কিশোরদের ছন্দে ছন্দে গানের মেলায় মুখরিত হয়ে যায় সাগর কন্যার উঠান। বলছিলাম আনোয়ারা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গুর কথা। উপজেলার পূর্ব পাশ ১০ নম্বর হাইলধর ইউনিয়নে এসে ফকিরার চরে মিশেছে।
ফকিরার চর! শুনতে নামটা তেমন আকর্ষনীয় না হলে ও তার পুরো ছবিটায় আকর্ষনে ভরপুর। ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে এই ফকিরার চর পর্যটকদের মায়ায় বেধেছে। হাইলধর ইউনিয়নের ইছাখালী ও হাইলধর গ্রামের পাশ সংলগ্ন এই চর এলাকার অবস্থান। চরে যাওয়ার আগেই সেই ব্রিটিশ আমলের ফকির হাট এবং ঐতিহাসিক মিঞা হাজী দৌলত (রহঃ) এর মাজার। মাজারের পাশ দিয়েই চরের যাওয়ার মূল সড়ক। ঘর-বাড়ির কারণে মাজারের আগে থেকে চর দেখা যায়না। মাজার পেরোলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ-শ্যামল ফসলে ভরা এক বিশাল সবুজ শাক-সবজির মেলা। তারপরই সরকারের দেওয়া উচু বেরিবাঁধ। এই বেরিবাঁধে বসেই কবিরা রচেন কবিতা, আর নবীন শিল্পীরা জোর গলায় গাইতে শুরু করে। সাগর কন্যার বুকে তিমির খেলা দেখায় মগ্ন থাকে অনেকি।
করোনার ঘরবন্দিত্বে সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ফকিরার চরের সুন্দর চোখে পড়েছে ভ্রমন প্রেমিকদের। এই চরের আরেক বৈশিষ্ট্য হলো এই চরে দাঁড়িয়ে চারটা উপজেলা এক সাথে দেখতে পাওয়া যায়। এর উত্তর পাশে আনোয়ারা, পূর্বপাশে চন্দনাইশ, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় বাশখালী আর দক্ষিণ পূর্ব কোণায় সাতকানিয়া উপজেলা।
গত সাত-আট বছরে ভাঙ্গনে নদীর প্রস্থ দ্বিগুন হলেও দুই বছরে বেরিবাঁধ দেওয়াই তা এখন ভাঙ্গন মুক্ত। বাধেঁর দু’পাশের সারি সারি কলা গাছ যেন ঘিরে রেখেছে সাগর কন্যার রুপ সৌন্দর্য। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় বৈঠা বেয়ে নদীর বুকে ভেসে চলে অনেকেই। মাঝিমাল্লারা বাশহালি-মইশহালির গানে নৌকায় পাল তুলে ঘুরঘুরিয়ে চলে গন্তব্যের দিকে। সময় পেলেই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুগুরতে আসে আশপাশের গ্রামসহ দূরের ভ্রমন প্রমিকরা। মন ফ্রেশ করার জন্য এটাই প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে অনেকের। অনেকেই আসে আবার তাজা শাক-সবজি ক্রয় করার জন্য। বেরি বাঁধের দুই পাশের সবুজ দুর্বাঘাস তারি মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু তাল গাছ। কৃষকদের লাঠি নিয়ে গরু ছড়ানোর দৃশ্য এই যেন প্রকৃতির অশেষ সুন্দর্যে ঘেরা।