পৌরভোটে বরুড়া ও চৌদ্দগ্রাম পৌরভোটে স্বস্তিশঙ্কায় নৌকা বিভেদে ধানের শীষ

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া পৌরনির্বাচনে চলছে শেষমুহূর্তের হিসাব- নিকাশ। দলীয় ঐকমত্যের কারণে চৌদ্দগ্রামে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি ঘুরপাক খাচ্ছে দলের কোন্দল-বিভেদে। শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ভোট। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ছিল প্রচারের শেষ সময়। শেষ সময়ের প্রচারে সরগম ছিল চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ২৬ গ্রাম। পোস্টার, ব্যানারের পাশাপাশি গানে গানে মুখর ছিল নির্বাচনি এলাকা।

চৌদ্দগ্রাম পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের জিএম মীর হোসেন মীরু, বিএনপির হারুন অর রশিদ, মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান শাহরিয়ার খাঁ ও জগ প্রতীক নিয়ে বেলাল হোসেন মিয়াজী।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

চৌদ্দগ্রামে মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নতুন মুখ। তবুও জয়ের ব্যাপারে দলটির নেতাকর্মীরা নির্ভার। কারণ বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে নেমেছেন প্রচারে। মিজানুর রহমান বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে একজন কর্মী হিসেবে তার পক্ষে কাজ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি সেটাই করেছি।’

জয়ের ব্যাপারে কি ভাবছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন-কে বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামে নৌকার কোন বিদ্রোহী নেই। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তাই জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিএম মীর হোসেন মীরু বলেন, ‘পৌরসভাসহ পুরা চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। তাই নৌকা এখন সবার পছন্দের প্রতীক। পৌর নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীরা সবাই দিন রাত খেটেছে। আমি জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।’

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

তবে চৌদ্দগ্রাম পৌর বিএনপিতে রয়েছে বিভেদের সুর। মেয়র পদে বিএনপি হারুন অর রশিদকে মনোনয়ন দেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দুইজন। তারা হলেন উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি হাসান শাহরিয়ার খাঁ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি বেলাল হোসেন মিয়াজী। এ বিষয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আন্দেলনের অংশ হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।’ তবে মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্রোহী হাসান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান ও দলের মহাসচিবকে মিসগাইড করে আমার মনোনয়নকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।’ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফারুক আহম্মদ জানান, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় মেয়র পদে চার জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫১ জন ও নারী সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন।

চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় ভোটার ২৮ হাজার ১৯৭ জন, তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৪৩ জন ও মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ১৫৪ জন। ৯টি ওয়ার্ডে ১২টি ভোট কেন্দ্রে ৭৫ টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে।

এদিকে বরুড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শংকায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, সারাক্ষণ মামলা-হামলা হুমকির কারণে প্রচার করতে পারেননি তারা। বিএনপি প্রার্থী জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে প্রচার করতে পারিনি। প্রচারের মাইক ভেঙে ফেলা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীর স্ত্রীদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি জয়ী হবে।’ বরুড়া পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

নৌকা প্রতীক পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বকতার হোসেন। তিনি বলেন, যারা বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন তারা কেউ আওয়ামী লীগের না। তারা বিভিন্ন দল থেকে অনুপ্রবেশকারী। সত্যিকার আওয়ামী লীগের কর্মী কখনও দলের প্রতি বিদ্রোহ করে প্রার্থী হতে পারে না।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বাহাদুরুজ্জামান বৃহস্পতিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান। তিনি মিয়া কামরুল নামে পরিচিত। গত বুধবার তিনি জেল থেকে জামিনে বের হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন আব্দুল কাদির সাইদ।

এছাড়া মেয়র প্রার্থী আছেন ওয়ার্কস পার্টির আব্দুল কাদির ও স্বতন্ত্র আবুল বাশার। বরুড়া পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯ জন ও ১০ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

 

সংবাদ সারাদিন