পদ্মা সেতুতে বাসপ্রতি টোল হতে পারে ২৩৭০ টাকা

বড় বাসের ক্ষেত্রে টোলের হার হতে পারে ২ হাজার ৩৭০ টাকা। এ ছাড়া ছোট ট্রাকের জন্য ১ হাজার ৬২০, মাঝারি ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ হাজার ১০০ ও বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৭৭৫ টাকা টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ ||

কোটি মানুষের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। বৃহস্পতিবার ১০ই ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সব অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রাষ্ট্রের তথা জনগনের করের টাকায় নির্মিত এ সেতুর ব্যয় গাড়ি পারাপারের ভাড়া বা টোল নেওয়ার মাধ্যমে তোলা হবে। চূড়ান্ত না হলেও টোলের একটি প্রাথমিক হারও নির্ধারণ করেছে সেতু বিভাগ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করা হলে কত টাকা টোল ধার্য করা উচিত, সে বিষয়ে দাতাদের শর্ত বা পরামর্শ থাকে। কিন্তু জনগণের করের টাকায় নির্মিত সেতুর ক্ষেত্রে এ রকম কোনো নীতিমালা নেই। সাধারণত সেতু হওয়ার আগে ফেরিতে যে হারে টোল নেয়া হয়, সেতুতেও সেই হারে টোল নির্ধারণ করে থাকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।

পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে পরের ১৫ বছরের জন্য সেতু বিভাগ একটি টোল হার ঠিক করে গত বছর। সেই হার অনুসারে, বড় বাসের ক্ষেত্রে টোলের হার হতে পারে ২ হাজার ৩৭০ টাকা। এ ছাড়া ছোট ট্রাকের জন্য ১ হাজার ৬২০, মাঝারি ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ হাজার ১০০ ও বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৭৭৫ টাকা টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি ১৫ বছর পরপর টোলের হার ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেতু বিভাগের ঐ প্রস্তাবে।

মাওয়া ফেরিঘাটের টোল আদায় কেন্দ্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে পদ্মা পাড়ি দিতে ফেরিতে দিনের বেলা একটি বাসকে ১ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হয়। যাত্রী থাকলে এর সঙ্গে ৪৫০ টাকা যোগ হয়। রাতের বেলা যোগ হয় আরও ৪৭০ টাকা। সব মিলিয়ে যাত্রীবাহী বাসের টোল দিনে ১ হাজার ৮৫০ টাকা এবং রাতে ২ হাজার ৩২০ টাকা। ফেরি পারাপারে প্রাইভেট কারের টোল ৫০০, মাইক্রোবাসের ৮৫০ এবং মোটরসাইকেলের ৭০ টাকা। ফেরিতে ট্রাকের টোল ১ হাজার ৮৫০ টাকা। এর সঙ্গে নির্দিষ্ট সীমার পর প্রতি টনে ১৬০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচ যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে বেশি। আবার এর দৈর্ঘ্যও বেশি। এ কারণে পদ্মা সেতুতে টোল বেশি হবে। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আর পদ্মা সেতু তৈরিতে সর্বশেষ হিসাব পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়। এখন সেতুটি পারাপারে বড় বাসকে ৯০০, ছোট বাসকে ৬৫০, বড় ট্রাককে ১ হাজার ৪০০, মাঝারি ট্রাককে ১ হাজার ১০০ এবং ছোট ট্রাককে ৮৫০ টাকা হারে টোল দিতে হয়। প্রাইভেট কারের টোল ৫০০ টাকা।

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। সেতু নির্মাণের জন্য তাদের ঋণ হিসাবে টাকা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকার যথাসম্ভব টোলের হার সীমিত রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।

শুক্রবার ১১ই ডিসেম্বর এসব তথ্য জানিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, টোলের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির স্বার্থে। সরকারের উচ্চপর্যায় চাইলে এটা পরিবর্তন করতে পারে। তাই টোলের হার চূড়ান্ত বলা যাবে না।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ঝড়-ঝঞ্ঝার প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকেনি সেতুর কাজ। নির্মাণ শুরুর তিন বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারে বসানো হয় প্রথম সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান)।

মূল সেতুর ৪২টি পিলারে বসানো হবে ৪১টি স্প্যান এমন পরিকল্পনায় সময়ের সঙ্গে এরপর কর্মযজ্ঞ এগিয়ে চলে। ১০ই ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্যে দিয়ে গত ৩ বছরে সেতুতে সবগুলো স্প্যান বসানো হলো। এসব স্প্যানের মধ্যদিয়ে চলবে রেল আর উপর দিয়ে অন্যান্য যানবাহন।

তিনি আরো জানান, আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতু চালু করতে হলে চলতি মাসের মধ্যে সব স্প্যান বসাতেই হতো। অর্থাৎ শেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পরিকল্পনামতোই কাজ এগোয়। পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৮২ শতাংশের বেশি। মূল সেতুর কাজের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৮.৩৮ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের চুক্তি মূল্য ১২ হাজার ১৩৩.৩৯ কোটি টাকা।

এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৭২৩ দশমিক ৬৩ কোট টাকা। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৫.৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫.১৭ শতাংশ। নদীশাসন কাজের চুক্তি মূল্য ৮ হাজার ৭০৭.৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৬৭৪.৪৮ কোটি টাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন