|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ ||
শত প্রতিকুলতা পেরিয়ে বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে পদ্মা সেতু। দক্ষিণবঙ্গের একুশ জেলার যাত্রীদের উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্ন পূরণে সর্বশেষ ‘স্প্যান টু-এফ’ বসানোর মধ্যে দিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আর এই দৃশ্যমান পদ্মাসেতুর সৌন্দর্য প্রমত্তা পদ্মার দু’প্রান্তের মানুষের মধ্যে উচ্ছসিত আনন্দে ভাসছে।
অন্যদিকে পদ্মাসেতু চালু হলে বন্ধ হবে শিমুলিয়া ফেরিঘাট। শিমুলিয়াঘাটের খাবার হোটেলসহ অস্থায়ী প্রায় হাজার খানিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। হলদিয়া ইউনিয়নের মৌছা গ্রামের মো: সোহাগ শেখ। তিনি বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ৬ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। ঘাট বন্ধ হলে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না । তেমন টাকাও নেই যে অন্যত্র গিয়ে ব্যবসা করবো। ঘাট বন্ধ হলে কপালে কী আছে আল্লাহই ভালো জানে। তারপরও সেতু হওয়ায় অন্য সবার মতো খুশি সোহাগ শেখও।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ২ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নাম্বার পিয়ারের উপর সর্বশেষ ৪১তম ‘স্প্যান টু-এফ’ সফলভাবে বসানো হয়েছে। এর আগে সকাল থেকে ঘন কুয়াশার মধ্যেই সেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান (টু-এফ) নির্ধারিত পিয়ার ১২ ও ১৩ নাম্বার পিয়ারে বসানোর সকল কর্মযজ্ঞ চালানো হয়। বহনকারী বিশ্বের শক্তিশালী তিয়ান-ই- ক্রেনের নোঙর কাজসহ স্প্যানটি পিয়ারের উপর তুলতে শুরু করে এবং সফলভাবে স্প্যানটি বসানো হয়। ফলে যুক্ত হলো পদ্মাসেতুর দু’পাড়।
এদিকে, পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় মাওয়া প্রান্তের সাধারণ মানুষজন দারুণ খুশি। এখানকার স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। পদ্মাসেতুর প্রকল্পের জন্যে তাদের বাপ-দাদার জমিজমা স্বল্পমূল্যে দিয়েছেন। রুহুল আমিন বলেন, দেশের উন্নয়নে বৃহত্তর স্বার্থে বাপ-দাদার জমিজমা স্বল্পমূল্যে দিয়ে দিয়েছি। আমরা এ ভেবে খুশি আমাদের বুকের ওপর দিয়ে অন্য জেলার যাত্রীরা ঢাকাসহ নিজেদের গন্তব্যে যাবেন। এ জন্য আমাদের এখন দুঃখ নেই।
মেদিনিমন্ডল এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন লালু জানান, দেশের মানুষের টাকায় পদ্মাসেতু হচ্ছে এতে আমি আনন্দিত। এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পদ্মাসেতুতে আমার জায়গা গেলেও দেশের একটি সম্পদ পেয়েছি আমরা।
কুমারভোগ এলাকার বাসিন্দা রশিদ মিয়া জানান, পদ্মাসেতু হওয়ার আগে মাওয়ায় জমির দাম ছিলো ৩০ হাজার টাকা শতাংশ। পদ্মারসেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে দাম বাড়তে থাকে। পদ্মাসেতু যখন দৃশ্যমান হচ্ছে তখন ৭ লাখ টাকাতেও মাওয়ায় জমি পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, পদ্মাসেতু প্রকল্পের পূর্ণবাসনকেন্দ্রে বসবাসরত মো: দোলন মিয়া জানান, পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্ন ছিলো। এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এ জন্যে আমরা এলাকার মানুষ সবাই খুশি।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মাসেতু। তিনি সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমরা পারি নিজেদের অর্থায়নে সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু গড়তে। এটি শুধু মুন্সীগঞ্জ ও দক্ষিন বাংলার জেলার জন্যই না। এটি সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নে একটি মাইলফলক।
অপরদিকে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূলসেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, বৃহস্পতিবার ১০ই ডিসেম্বর ১২টা ২মিনিটের দিকে পদ্মা সেতুর ৪১ তম স্প্যান সফলভাবে বসানো হয়েছে। যেটি পদ্মাসেতুর শেষ স্প্যান। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।