|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ||
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ থেকে দগ্ধ হয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল মালেক (৬০) ও মিজান (৩৪) নামে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে ২০ জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া দগ্ধ আরও ১৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শনিবার বিকাল নাগাদ ১২ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। বাকিদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। শুক্রবার রাতের এই দুর্ঘটনায় দগ্ধ পঞ্চাশের বেশী মানুষের অধিকাংশকেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল।
আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে বার্ন ইউনিটে যান নারায়ণগঞ্জের ডিসি জসিম উদ্দিন। তিনি মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার আর আহতদের ১০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর শনিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট ১১ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে শিশু জুয়েলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।সকাল ১১টার দিকে মারা যান রাসেল নামে একজন।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন , দুপুরে আরও দুজন মারা যায়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৪ জন হল।এরপর বিকালে আরও তিনজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭তে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
নিহত ১৬ জনের মধ্যে জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১) দুই ভাই। তাদের বাসা নারায়ণগঞ্জের তল্লায়। সাব্বির বিএ পাস করেছেন। জোবায়ের তোলারাম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
এছাড়া বাবা মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মারা যান ছেলে জুনায়েদ (১৬)। দুদিন আগে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থেকে বাবার কাছে এসেছিলেন জুনায়েদ।
নিহত অন্য ১৩ জন হলেন- মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪),
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জুলহাস ফরাজির ছেলে জুয়েল (৭) , পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী মো. রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার হুমায়ুন কবির (৭২),পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালি গ্রামের মো. বেলায়েতের ছেলে জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টস কর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩),
নারায়ণগঞ্জ নিউখানপুর ব্যাংক কলোরি কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শেখদী গ্রামের মৃত মহসিনের ছেলে মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার আনোয়ার হোসেনের ছেলে জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), মো. রাসেল (৩৪) এবং ফতুল্লার তল্লার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০)। ৷
শুক্রবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জনেরও বেশি মুসুল্লি দগ্ধ হন। প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান , নামাজ চলার সময়ে হঠাৎ করেই বিকট শব্দ হতে শুরু করে। আশপাশের লোকজন ছুটাছুটি করে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে।
খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন৷ পরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ও জেলা প্রশাসকজ মো. জসিম উদ্দিন।
এদিকে বিস্ফোরণের কারণ উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান বলেন, মসজিদের মেঝের নিচ থেকে তিতাস গ্যাসের একটি লাইন গিয়েছে৷ সেখান থেকে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানতে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানান তিনি।
সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণে মসজিদের ৬টি এসি পুড়ে গেছে এবং জানালার কাচও উড়ে গেছে।
গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।