নকল মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‌অপরাজিতার মালিক ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী

করোনাদুর্যোগের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমীন জাহান। ইতোমধ্যেই তার (শারমিন জাহান) বিরুদ্ধে মামলা করেছে মাস্ক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনাদুর্যোগের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমীন জাহান। ইতোমধ্যেই তার (শারমিন জাহান) বিরুদ্ধে মামলা করেছে মাস্ক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার রাতে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শারমিন জাহান ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি ছিলেন। ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

২০১৬ সালের ৩০শে জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩শে জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী হিসেবে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।

উহানে পড়াশুনারত শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল গেল ২৭শে জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়।

এই কার্যাদেশের বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০শে জুন প্রথম দফায় ১৩০০, ২রা জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১০০০ এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কোনো কোনো ফেইস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ পাওয়া গেছে। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত। এবিষয়ে ১৮ই জুলাই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিএসএমএমইউ। ২০শে জুলাই লিখিত জবাবে শারমিন দুঃখপ্রকাশ করেন, যা আসামির দোষ স্বীকারের শামিল।”

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, এজাহারে উল্লেখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শারমিন জাহান বলেছেন, তারা কোন নকল মাস্ক সরবরাহ করেননি। সব প্রোডাক্টটি চীন থেকে ইম্পোর্টেড। এগুলোতো তারা করেননি জানিয়ে শারমিন এও বলেন, তারা শুধু এগুলো সরবরাহ করেছেন মাত্র।

উল্টো শারমিন বলেন, “প্রোডাক্ট খারাপ হলে, বিএসএমএমইউ প্রথমবারই আমাদের বলতে পারত। আমরা সেটা যাচাই করে দেখতে পারতাম।” তবে নিজেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে শারমিন বলেন, মামলা যে কেউই করতে পারে, আইনি প্রক্রিয়াতেই অভিযোগের মোকাবিলা করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন