নিহতের স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে-জামাতা গ্রেফতার
|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ ||
পারিবারিক কলহের জেরে প্রায়ই মাকে মারধর করতেন বাবা। একপর্যায়ে বিবাদ চরমে পৌঁছলে মাকে মৌখিক তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২৮ বছর বয়সী ছেলে খায়রুল ইসলাম ও ৩৩ বছরের মেয়ে নাজমা খাতুন মিলে বাবা আবদুল খালেককে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে বাবার লাশ বস্তাবন্দী করে মোটরসাইকেলে নওগাঁর পোরশা উপজেলার বালিয়াচান্দা গ্রাম থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার একটি খালে ফেলে আসেন খায়রুল। এরপর এক মাসের বেশি সময় পর বাবা নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
হত্যার প্রায় এক মাসের বেশি সময় পর নওগাঁর পোরশা থানা পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খায়রুল ইসলাম ও নাজমা খাতুন এভাবে তাঁদের বাবাকে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন। খায়রুল ও নাজমা ছাড়াও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত আবদুল খালেকের স্ত্রী ফাইমা খাতুন ও জামাতা মোদাচ্ছের হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পোরশা থানার পুলিশ। খায়রুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রীরামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
বুধবার দুপুরে নওগাঁর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আবদুল খালেক হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রকিবুল আক্তার। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুন খান চিশতী, সাপাহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বিনয় কুমার, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া আখতার, পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এএসপি রকিবুল আক্তার বলেন, গত সোমবার খায়রুল পোরশা থানায় উপস্থিত হয়ে তাঁর বাবা আবদুল খালেকের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি করেন। নিখোঁজ হওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর থানায় এসে জিডি করায় পুলিশ ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তে প্রাথমিক কিছু তথ্য ও সন্দেহের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার নিখোঁজ খালেকের ছেলে খায়রুলকে পুলিশ নওগাঁর সাপাহার সার্কেল অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে খায়রুল স্বীকার করেন, তাঁর বোন নাজমা খাতুনের সহযোগিতায় বাবা আবদুল খালেককে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। খায়রুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবদুল খালেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে আবদুল খালেকের স্ত্রী ফাইমা খাতুন, মেয়ে নাজমা খাতুন ও জামাতা মোদাচ্ছেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আসামি খায়রুলের দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে এএসপি রকিবুল আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খায়রুলের বাবা আবদুল খালেকের সঙ্গে তাঁর মা ফাইমা খাতুনের বনিবনা হচ্ছিল না। পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৭ জানুয়ারি ফাইমা খাতুনকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন আবদুল খালেক। মাকে তালাক দেওয়ার সংবাদ পেয়ে ছেলে খায়রুল তাঁর কর্মস্থল ও মেয়ে নাজমা খাতুন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে মা–বাবার মধ্যে বিবাদ মীমাংসার চেষ্টা করেন। স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি খায়রুল মাকে উপজেলার পিছলডাঙ্গা গ্রামে তাঁর খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাতে খায়রুল ও নাজমা তাঁদের বাবা আবদুল খালেককে মায়ের সঙ্গে বিবাদের মীমাংসা করে ফেলার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ মানতে অস্বীকার করলে নাজমা ও তাঁর স্বামী মোদাচ্ছেরের সহযোগিতায় বাবা খালেকের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন খায়রুল। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে খায়রুল বাবার লাশ একটি বড় পাটের বস্তায় ভরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা সদরে তাঁর কর্মস্থল শ্রীরামপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার পেছনে একটি খালে ফেলে দিয়ে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, খালে লাশ ফেলে দেওয়ার ১২ দিন পর বস্তাবন্দী ওই লাশ ভেসে উঠলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে এবং অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে দাফন করে। ২৭শে ফেব্রুয়ারি নিহত খালেকের ছোট ভাই জাকির আলম লাশের আলমত দেখে আবদুল খালেককে শনাক্ত করেন এবং থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান দুপুরে বলেন, এ ঘটনায় নিহত আবদুল খালেকের ভাই জাকির আলম বাদী হয়ে গ্রেপ্তার আসামিদের নাম উল্লেখ করে পৃথক একটি হত্যা মামলা করেন। বুধবার বিকেলে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আবারও ফোন করা হলে ওসি বলেন, প্রধান আসামি খায়রুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁর বোন নাজমাও এই মুহূর্তে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন।