দেবিদ্বারে টোলের নামে চাঁদা নিচ্ছে ইজারাদারের বাহিনী

দেবিদ্বার পৌর সদরে ঢোকার মুখে তিন কিলোমিটারের মধ্যে টোল আদায়ের নামে বাহিনীর মাধ্যমে বসানো হয়েছে ৭টি চাঁদার সিন্ডিকেট।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||

জেলার দেবিদ্বার পৌরসভায় টোলের নামে চাঁদা নিচ্ছে শহরের সাতটি পয়েন্টের ইজারাদারের বাহিনী। দেবিদ্বার পৌর সদরে ঢোকার মুখে তিন কিলোমিটারের মধ্যে টোল আদায়ের নামে বাহিনীর মাধ্যমে বসানো হয়েছে ৭টি চাঁদার সিন্ডিকেট। পৌর সদর অতিক্রম করতে প্রতিটি মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, নসিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি, অটোরিকশা, ইজিবাইক চালককে ৭টি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, কোনো একটি খালি সিএনজি গ্যাস রিফিল করতে এলে যত টাকার গ্যাস লাগে এই চাঁদার পরিমাণ এর চেয়েও দ্বিগুণ।

এদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শুধু সিএনজি এবং অটোরিকশার নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী বহন করলে প্রতি ট্রিপে পাঁচ টাকা করে টোল আদায়ের নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট খালি সিএনজি, অটোরিকশা, পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান স্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রম করলেই আদায় করছে ৩০-১০০ টাকা চাঁদা। এতে জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভা গঠন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এখানে পৌর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড না থাকলেও ৭টি অনির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা ইজারা আদায় করা হচ্ছে। আর এ দেড় কোটি টাকার ইজারা নিয়ে জনসাধারণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব স্ট্যান্ড সরকারদলীয় নেতারা ইজারা নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে সাব-কন্ট্রাক্টে বিক্রি করে দেয়। কয়েকটি হাতবদলের পর তা চলে যাচ্ছে অসাধু চক্রের হাতে। গ্রহীতারা প্রতিটি স্ট্যান্ডে ২০-৩০ জন করে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়োগ করছে। এসব লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা সিএনজি, অটোরিকশা, পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান দেখলেই গাড়িতে আঘাত করে গতিরোধ করে। তারপর নিজেদের বানানো টোকেন দিয়ে ৩০-১০০ পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যদের হাতে জিম্মি চালকরা প্রতিনিয়তই নাজেহাল, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে পৌর এলাকার পান্নারপুল সিএনজি স্ট্যান্ডে সব ধরনের যানবাহন থেকে টোলের নামে চাঁদা আদায় করছে এলাকার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট।

চলতি মাসে এসব স্ট্যান্ডের পুনরায় ইজারার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সামনের ইজারায় অভিযুক্ত সিন্ডিকেটকে স্ট্যান্ড ইজারা না দিয়ে পৌরসভা তাদের নিজস্ব জনবল দিয়ে যেন টোল আদায় করা হয়- এমন দাবি এলাকার লোকজনসহ চালকদের। আবুল হোসেন, জাকির মিয়া, বেলাল উদ্দিন, নাছির মিয়া, আবদুল কাদিরসহ চালকরা বলেন, আমরা যাত্রী না নিলেও গ্যাস নিতে পান্নারপুল এলেই ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাহিদা অনুসারে চাঁদা না দিলে লাঠিয়াল বাহিনী কর্তৃক মারধর করা হয়। ট্রাকচালক সোহরাব হোসেন বলেন, চাঁদা দেয়া বড় কথা না; কিন্তু এসব স্ট্যান্ডে এলেই গাড়িতে লাঠির আঘাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে লাঠিয়াল বাহিনী, টাকা দিতে একটু দেরি হলেই মারধর শুরু হয়। একই অভিযোগ পিকআপ চালক আমির হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন চালকের।

পান্নারপুল সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারাদার হাজী এমএ কাইয়ুম ভূঁইয়া বলেন, কেউ যদি পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নিয়মের বাইরে চাঁদা আদায় করে আমি নিজেও তার বিরুদ্ধে কথা বলব। দেবিদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন, পৌরসভার নির্ধারিত নিয়মের বাইরে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পৌর প্রশাসক রাকিব হাসান বলেন, নির্ধারিত টোলের বাইরে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এরআগে আমরা দুয়েকজন চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ সারাদিন