|| সারাবেলা প্রতিনিধি, দুর্গাপুর (রাজশাহী) ||
মঙ্গলবার সকাল ১০টা। তিন শিশু খেলছিল উপজেলার থানাসংলগ্ন মন্দিরের পেছনে। খেলার ছলে শিশুরা মন্দিরের পেছন দিয়ে বয়ে যাওয়া হোজা নদীতে পা ভেজাতে যায়। গত কয়েক দিনের উপুর্যপরি বৃষ্টিতে ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দিয়েই পানির স্রোত প্রবল বেগে বয়ে যাচ্ছে। পানিতে নেমে নদীর মাঝামাঝি ঝুলন্ত ব্রিজের কাছাকাছি যেতেই প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ওরা। এ সময় অনেকেই আশপাশ থেকে তাকিয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে যায়নি ওদের বাঁচাতে।
তবে ওদের ভেসে যাওয়া দেখে থেমে থাকতে পারেননি দুর্গাপুর থানা পুলিশের ড্রাইভার পুলিশ কনস্টেবল আতিক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাই নদীর প্রবল স্রোতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। পানির প্রবল স্রোত থেকে টেনে তোলেন ওই তিন শিশুকে। এমন সাহসী কাজের কারনে থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের প্রশংসায় ভাসছেন ড্রাইভার আতিক। তবে এ ঘটনাটিকে দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবেই ভাবছেন ড্রাইভার আতিক।
স্রোতে ভেসে যাওয়া ওই তিন শিশু হলো, দুর্গাপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল জাকির হোসেনের ১১ বছরের ছেলে মাহাদী, স্থানীয় ইউনুস আলীর ছেলে রুবেল, বয়স ১১ এবং কলেজ শিক্ষক আয়নাল হকের দশ বছরের ছেলে স্বচ্ছ।
থানা পুলিশের ড্রাইভার আতিক জানান, থানার সামনেই নদীর পাশেই তার বাসা। তার স্ত্রীও পুলিশ সদস্য। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হওয়ায় ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে স্ত্রীকে সময় দিতে বাসায় যেতে হয় তাকে। এমনি এক সময় সকাল ১০ টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে বাসার পেছন দিকে নদীর পাশে যেতেই দেখি তিনটি শিশু পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। অনেকেই নদীর দুই পাশ থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছে, কেউবা মোবাইলে ভিডিও করছে বা ছবি তুলছে। ওই তিন শিশুকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসছেনা। এ দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারিনি। প্রবল স্রোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেসে যাওয়া ওই তিন শিশুকে ডাঙায় তুলে আনি।
তিনি আরো বলেন, নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকেই শিশুগুলোকে উদ্ধার করেছি। অনেকেই এদৃশ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেও তাতে আমার মন সায় দেয়নি। যা করেছি মানবিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে করেছি।
স্থানীয় আবু হেনা জানান, দুর্গাপুর উপজেলা সদরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে হোজা নদী। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম এই নদীতে এতো পানির স্রোত দেখলাম। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে ওই তিন শিশু খেলার ছলে নদীর পানিতে পা ভেজাতে গিয়ে প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। এ সময় থানা পুলিশের ড্রাইভার আতিক ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই তিন শিশুকে উদ্ধার করেন।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খুরশীদা বানু কণা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি দুর্যোগ, মহামারি ও দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে আসে এবং এসেছে। পুলিশ সদস্যদের এমন গর্বিত কাজে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
ড্রাইভার আতিক সম্পর্কে ওসি কণা বলেন, আতিক অনেক সাহসী একটা ছেলে। তার স্ত্রীও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। সাহসী এমন কাজের জন্য আতিক নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। পুলিশ কনস্টেবল আতিকের সাহসী ও মানবিক এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলেও জানান ওসি কণা।