|| আব্দুস সালাম সুজন, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ ||
পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশী ব্যস্ত মানুষ হচ্ছে ভোটপ্রার্থীরা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌর এলাকাও এর বাইরে নয়।মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ও সোনারগাঁও পৌরসভার মধ্যে সীমানা প্রাচীর নিয়ে মামলা হওয়ায় ৫ম ধাপে হতে পারে সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক করে জনগণের কাছ থেকে সমর্থন ও দোয়া চাইছেন তারা। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও ফেসবুক প্রচারণায় জানাচ্ছেন নিজেদের উপস্থিতি।এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নের জন্য যে যার মতো স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তৃণমূল পর্যায়েও মনোনয়ন পাওয়ার ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বিএনপিসহ অন্যদলগুলোর প্রার্থীরাও এই পথপদ্ধতির বাইরে নয়।
সোনারগাঁও পৌরসভায় নৌকার মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মাঠে রয়েছেন। এবার নৌকার মনোনয়নের জন্য যারা মাঠে নেমেছেন তারা হলেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগির আহমেদ, যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুব আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপ-সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন।
এদিকে মেয়র মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৃণমূলের সমর্থনে কাজ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। পৌর আওয়ামী লীগ নেতারা চারজনের নাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি ছয়জনের নামের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন হাইকমান্ডের কাছে।পরবর্তীতে অন্য দুই জন প্রার্থীর নামও পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে ছয় জন প্রার্থীর সবার নাম পাঠানো হয়েছে।
নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ -৩ সোনারগাঁ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ও সোনারগাঁ মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত পৌর নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও ব্যাপক গনসংযোগ করে যাচ্ছেন । বিভিন্ন সময়ে পৌর এলাকার ভোটাদের মাস্ক বিতরণ, খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করার প্রুতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
যোগ্য প্রার্থী বেছে নেয়ার জন্য পৌরসভার ভোটাররাও বেশ উৎসাহী। তবে ছয় প্রার্থীর মধ্যে বেশ আলোচনায় আছেন ছগির আহম্মেদ ও ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী মুজিবুর রহমান।
২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের সাথে পরাজিত হন গাজী মুজিবুর রহমান। এরপর ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করলে মনোনয়ন দৌড়ে পরাজিত হয়ে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। এবারের পৌর নির্বাচনের দিন যতই ক্ষনিয়ে আসছে তিনি ততই পৌর নির্বাচনে ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে কাজ করছেন। বিশেষ করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোশারফ হোসেনকে জয়ী করার পেছনে গাজী মজিবুর রহমানের বিশেষ অবদান ছিল। সে নির্বাচনের পর থেকে গাজী মুজিবুর রহমানকে ফের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য মোগরাপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা কাজ করছে।ক্লিন ইমেজের ও ত্যাগি একজন রাজনীতিক হিসেবে সুখ্যাতি আছে সাবেক এই যুবলীগ সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমানের । মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকার টিকিট প্রাপ্তিতে তিনিও অনেকটা এগিয়ে আছেন বলে দাবি তার।
গাজী মুজিবুর রহমান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, জননেত্র্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং আমি যদি বিজয়ী হই তাহলে আমার প্রথম কাজ হবে সোনারগাঁও পৌরসভাকে মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাস মুক্ত করা।মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে একসাথে পৌরসভার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবো।কোন ওয়ার্ড উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখবো।পৌর নির্বাচনে কোন অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকবে না আশা করি । সবাই এক হয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করবো। একটি আধুনিক পৌরসভা হিসেবে সোনারগাঁও পৌরসভাকে তৈরি করতে সকল প্রকার কাজ করে যাবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করবো।
নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগির আহম্মেদ। তিনিই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। তারা জানান, এরই মধ্যে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে তরুণ সমাজের পাশাপাশি সব মানুষের মাঝে আস্থার জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
ছগির আহম্মেদ বলেন, পৌরসভার উন্নয়নে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচিত হলে তিনি পৌরসভায় শিক্ষা বিস্তার, মাদকমুক্ত, শতভাগ স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ খাবার পানির সুব্যবস্থা ও সবার সমাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণের মাধ্যমে এটাকে একটি মডেল পৌরসভায় উন্নিত করবেন। তিনি বলেন, নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তা হলে আমি তাকে কি জয় উপহার দিতে পারব।
এ দিকে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি গত ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে সেই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান কাছে। এর পরও তিনি উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এবারো তিনি আশাবাদী দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এ ছাড়া অপর সম্ভাব্য প্রার্থী মোহাম্মদ হোসাইন ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওসমান গনিও আশা করছেন মনোনয়ন পাবেন। তারা যার যার মতো করে কাজ করছেন।
আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি একমাত্র নারী প্রার্থী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা। পৌর যুবলীগের বড় একটা অংশ কাজ করছেন তার পক্ষে।তিনিও মনোনয়ন দৌড়ে বেশ এগিয়ে আছেন।বিভিন্ন ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করছেন । একজন নারী হিসেবে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রুতিশ্রুতিও দিচ্ছেন নারী ভোটারদের।আওয়াম লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশি নারী নেত্রী।
একজন নারী প্রাথী হিসেবে পৌর ভোটারদের কাছে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, প্রথমবারের মতো পৌরসভায় মহিলা মেয়র প্রার্থী হিসেবে পৌরসভার জনগনের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ এখন নারী নেতৃত্বের উপরই বেশী শ্রদ্ধাশীল। কেননা একজন নারী তার দায়িত্বের প্রতি অন্য দশজন পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী দায়িত্বশীল থাকে। নারীরা কখনো তাদের দায়িত্বে অবহেলা করেনা। এবং একজন নারী কখনোই পুরুষদের মতো এতবেশী দুর্নীতি পরায়নও হয়না। তারা যেই দায়িত্ব পায়, সেটা তারা সঠিকভাবেই করার চেষ্টা করে। ইতিমধ্যেই সেটা প্রমান করেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অপর দিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে গত পৌরসভা নির্বাচন অংশগ্রহন করা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এগিয়ে রয়েছেন। মোশারফ হোসেন বলেন, আমি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনমিয় সভা করে আসছি।নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাহলে সোনারগাঁও পৌরসভায় এবার ফলাফল ভিন্ন হবে। এবার দল তাকে মনোনয়ন দিবে বলে আশা করছেন।এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়র প্রত্যাশা করছেন মো. শফিকুল ইসলাম নয়ন ও মোসাম্মৎ রুমা আক্তার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চরমোনাই থেকে মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্জ মাওলানা আবু জাহের ও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন পৌরনির্বানকে সামনে রেখে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন দেখতে চায় সোনারগাঁও পৌরবাসী।