দম ফেলার সময় নেই কাপাসিয়ার কামারদের

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||

মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা/কুরবানির ঈদ। আর এই কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় বাড়ছে কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা। পশু কুরবানিতে ব্যবহৃত হাতিয়ার যেমন দা, বটি, চাপাতি, ছুরি,চাকু, কুড়ালসহ লোহার তৈরী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরী করতে রাতদিন হরদম কাজ করছে। আর এই সময়টাতে যেন কোনরকম দম ফেলার সময় নেই কামারদের।

এদিকে কয়লার চুলোয় দগদগে লাল আগুনের ফুলকি আর গরম লোহায় ওস্তাদ-সাগরেদের ছন্দময় পিটুনিতে টুংটাং শব্দে মুখরিত করে তোলে আশপাশ। দিনশেষে রাতেও যেন বিরাম নেই এসব কারিগরদের। কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেক সময়ই ভুলে যান নাওয়া-খাওয়া। বছরের অন্যান্য সময়টাতে তেমন কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদের আগমনে তাদের কর্মযজ্ঞ ও ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

এদিকে কুরবানিকে সামনে রেখে ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে কামারদের দোকানে। অধিকাংশ মানুষই কুরবানির পশুর চামড়া ছেড়াঁর কাজটি সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে সম্পন্ন করতে অনেকে পুরাতনগুলোকে সংস্কারের জন্য নিয়ে আসছেন কামারদের কাছে। সময়মতো মেরামত করার জন্য ও নতুন  কিনে নেওয়ার জন্য ভিড় হচ্ছে কামারদের দোকানগুলোতে। কামারদের কাজের ব্যস্ততার কারণে একেবারেই দম ফেলার সময় নেই। তবে করোনাকালীন লকডাউনের কারণে এবার তাদের এই ব্যবসা আগের তুলনায় কমে গেছে বলে হতাশ কামাররা।

উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও বাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- রাস্তার পশ্চিম পাশে একটি ছোট খুপরী ঘরে কাজ করেন কামার নিরদ মন্ডল (৫০)। তিনি জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তার বাবার সময় থেকেই এ কাজ করছেন তিনি। বাবা গত হলেও এ পেশাকে রোজগারের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ধরে রেখেছেন তিনি।বর্তমানে হাতুড়ি আর ছেনির টুংটাং শব্দের ছন্দে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন বাবা ও ছেলে মিলে। তবে লকডাউনের কারণে মানুষ বাড়ি থেকে কম বের হওয়ায় আগের থেকে আয় কমে গেছে তাদের।

তিনি আরো জানান, নবম শ্রেনীতে পড়া অবস্থাতেই বাবার এই পেশায় জড়িয়ে ফেলি নিজেকে। এখন বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে। তবুও পূর্ব পুরুষের পেশাকে ধরে রেখে ভালোবাসা ও ভালোলাগা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অন্য পেশার প্রতি নেই তার কোন আগ্রহ। বরং তার কাছে ভালো লাগে এ পেশাই।

এছাড়াও কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কর্মরত কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের অন্যান্য সময়টাতে আমাদের কাজ ও ব্যস্ততা না থাকলেও কুরবানির সময় ঘনিয়ে এলেই কাজের ব্যস্ততার পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। সেই সাথে বেচাকেনাও চলে ভালো। তবে ঈদের দুদিন আগে থেকে রাত-দিন ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হয়। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। দুই মাস আগেও যেখানে ১ বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। সেই কয়লা এখন ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই তারা পুরাতন জিনিস মেরামত ও নতুন দা,বটি, ছুরি, চাপাতি,বটি,চাকু,কুড়ালসহ অন্যান্য জিনিসগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে একটু চড়া দামে।

তারা আরো জানান,গত বছরের সময়টাতে যতটুকুই কাজ করতে পেরেছি।কিন্তু এই বছরের সময়টা ভিন্ন। মহামারি করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বগতির কারণে দেশজুড়েই চলছে কঠোর লকডাউন। তাই দোকান খুলে কাজ করতে পারিনা। প্রচুর হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনার কারণেই মূলত আয়ের পথে ভাঁটা পড়েছে। আর আমাদের এই কাজে পরিশ্রম বেশি কিন্তু পারিশ্রমিক খুবই নগণ্য। এই প্রতিবেদককে তিনি আরো বলেন- সারাদিন আগুনের লাল শিখার পাশে বসে কাজ করতে খুবই কষ্টকর। তবুও পূর্ব-পুরুষদের রেখে যাওয়া এই পেশায় উৎসাহের কমতি নেই কামারদের।

 

সংবাদ সারাদিন