|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বরিশাল ||
প্রয়োজনীয়সংখ্যক বাস না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি। সংস্থার বরিশাল ডিপোর ৭৮টি বাসের মধ্যে ১৩টি তাপানুকুলসহ বর্তমানে রাস্তায় চলছে ৫৩টি। এসব বাসের মাধ্যমে দক্ষিনে সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরের রংপুর পর্যন্ত দিবা-রাত্রী যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিপোটির মাসিক আয় প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছে পৌঁছলেও নদীসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের ফেরিসেতুর টোল বাবদ মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকার মত গুনতে হচ্ছে ডিপোটিকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই লাভের গুড় পিপড়ায় খাবার মত অবস্থা।
করোনা সংকটের প্রথম তিন মাস সব যানবাহন বন্ধ থাকায় আরো একমাস অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করায় সংস্থার বরিশাল বাস ডিপোটির আর্থিক ভিত ভেঙে পড়ে। এই তিন মাসের মধ্যে একমাসের বেতন দিয়েছে সংস্থার সদর দফতর। বাকি দুইমাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ডিপোর নিজের আয় থেকে। তবে এখনো বরিশাল ডিপোর চলমান বেশীরভাগ বাসই ১০ থেকে ১৫ বছরের পুরোনা হওয়ায় ঐসব গাড়িতে আয় বাড়ছে না। উপরন্তু পরিচালন ব্যয় ও মেরামত খরচও বেশী।
এখনো প্রয়োজনীয় বাস না থাকায় পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে বরিশালের তাপানুকূল পর্যটন বাস সার্ভিস চালু করা যায়নি। অথচ ঢাকা থেকে নৌপথে প্রতিদিন শতশত পর্যটক বরিশালে পৌঁছে কুয়াকাটা যাওয়ার লক্ষ্যে মানসম্মত যাত্রীবাহী যানবাহনের খোঁজ করেন। এছাড়াও বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা বিভাগীয় সদরে ফেরিবিহীন সড়ক পথ চালু হলেও বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপো থেকে আজ পর্যন্ত কোন তাপানুকূল বাস সার্ভিস চালু করা যায়নি। অথচ প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ দাফতরিকসহ ব্যবসায়িক কাজে এ দুটি বিভাগীয় সদরে যাতায়াত করেন।
বর্তমানে বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপো থেকে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের বাংলাবাজার পর্যন্ত তাপানুকূল বাস সার্ভিস ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কানসাট, সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ, কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে চট্টগ্রাম এবং খুলনা, যশোর ছাড়াও গোপালগঞ্জ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলছে। এছাড়াও বরিশাল থেকে পাথরঘাটা ও আমুয়াসহ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী বাসচলাচল করছে। তবে এখনো বেশীরভাগ গাড়ীই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মান সম্মত না হওয়ায় রাষ্টীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার বাসে ভ্রমনে যাত্রীদের অনেক দূর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধীনতার পরে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের প্রচেষ্টায় সর্বপ্রথম বরিশালে বিআরটিসি’র বাস ডিপো চালু করা হয় ১৯৭৩ সালের ১লা জানুয়ারী। সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রী এম মনসুর আলী ও পানি সম্পদ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল ডিপোটির উদ্বোধন করেন। তখন বরিশাল থেকে ফরিদপুর হয়ে গোয়ালন্দঘাট ও বরিশাল-ফরিদপুর রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। পরে বরিশাল-মাদারীপুর রুটেও বাস সার্ভিস চালু করে সংস্থাটি। ১৯৮১সালে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক চালু হলে সংস্থাটি এই রুটে মিনিবাস সার্ভিসও চালু করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যায় সংকোচন ও কথিত লোকসান ঠেকানোর নামে ১৯৮২’র শেষ দিকে এরশাদ সরকার বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোটি বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তিকালে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী এম মতিউর রহমানের প্রচেষ্টায় ফের সংস্থার বরিশাল ডিপোটি চালু হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় বাসের অভাবে তা চলছিল অনেকটা খুঁড়িয়ে। ১৯৮৯ সালে অবস্থা এতোটাই করুন ছিল যে, শুধু টায়ারের অভাবে এই ডিপোর কোন বাস রাস্তায় নামতে পারছিল না। বিষয়টি নিয়ে তখন দৈনিক ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সরকারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে ফের এই ডিপোটি কিছুটা প্রান ফিরে পায়। ১৯৯২ থেকে দেশজুড়ে বিআরটিসি সংস্কারের অংশ হিসােব বরিশাল ডিপোটিও নতুনভাবে সচল করা হয়।
বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোতে সদ্য যোগ দেয়া ডিজিএম-অপারেশনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এই ডিপোটির সার্বিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। বলেন, সংস্থার সদর দফতরকে প্রতিটি রিভিউ মিটিংয়ে সার্বিক অবস্থা জানাোনা হয়। কর্তৃপক্ষ এই ডিপোর সার্বিক বিষয়ে সবকিছুই জানেন। এর উন্নয়নে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।