|| সারাবেলা প্রতিনিধি, হাওরাঞ্চল (সুনামগঞ্জ) ||
দেশের পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা এই তাহিরপুরে রয়েছে বালি ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদী। আরো রয়েছে বিশ্বনন্দিত দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্র টাংগুয়ার হাওর, টেকেরঘাট, বারেকটিলা, শিমুলবাগান ও শাপলার বিল। এছাড়াও রয়েছে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানীর ৩টি শুল্ক স্টেশন। সরকার প্রতিবছর এই তাহিরপুর উপজেলা থেকে আদায় করছে কোটিকোটি টাকা রাজস্ব। তারপরও এই উপজেলাবাসীর দূর্ভোগের শেষ নেই।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার মাঝ বরাবর তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি এসব কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সড়কটি নির্মাণের নামে প্রতিবছর চলে নানান নাটকীয়তা। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সড়কের নির্মাণ কাজ না করার কারণে প্রতিবছরই গচ্ছা যাচ্ছে রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা। আর সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই উপজেলার মানুষকে। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বর্ষায় ইঞ্জিনের নৌকায় চলাচল করতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে কাচা ও পাকা ভাংগাচুরা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে হতে হচ্ছে দূঘর্টনার শিকার।
কিন্তু তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের মোট দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ৮ কিলোমিটার। তার মধ্যে তাহিরপুর সদর হতে টাকাটুটিয়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার আরসিসি পাকা সড়ক। যার বেশির ভাগ অংশ ভাংগা। এসড়কের পোছনারঘাট এলাকা হতে পাতারগাঁও গ্রাম হয়ে চকবাজার পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার পুরোটাই মাটির সড়ক। আর এই ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ গত ২ যুগেও শেষ হয়নি। অথচ প্রতিবছর এই ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি নির্মাণ করার জন্য সরকার কর্তৃক লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুধু অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে এই ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি বর্তমানে এলাকার মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর চকবাজার হতে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত বাকি ৪ কিলোমিটার রয়েছে পাকা সড়ক। এই সড়কটি আংশিক ভাংগা হলেও মানুষ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সারাবছর যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু এই সড়কের মাঝখানে অবস্থিত পোছনারঘাট হতে চকবাজার পর্যন্ত মাত্র ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি বর্ষা আসলেই পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। এবং এই সড়কের কয়েকটি স্থান পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই বর্ষার প্রায় ৩-৪ মাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ডুবন্ত জায়গা নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় নেতৃবন্দদের সহযোগীতায় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাংগা সড়কটি লিজ নেয়। এরপর সারাবছর মাটির এই সড়কের উপর চলে টাকার খেলা। কিন্তু এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি যেন দেখার কেউ নেই।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন, আব্দুস সালাম, নুর আলী, আশরাফ আলী, আব্দুর রহমান, ইসলাম উদ্দিনসহ আরো অনেক ভুক্তভোগি বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের সাড়ে ৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা পোছনারঘাট হতে চকবাজার পর্যন্ত সঠিক ভাবে নির্মাণ করলেই সারাবছর বিভিন্ন যানবাহন দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু এলজিইডির সহযোগীতায় সংশ্লিস্ট ঠিকাদাররা অসময়ে রাস্তার নির্মাণ কাজ করার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির নির্মাণ আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি।
উজান তাহিরপুর গ্রামের রিক্সাচালক শামসু মিয়া বলেন- আমার শান্তি পরিবহণ নিয়ে খুবই অশান্তির মাঝে আছি শুধুমাত্র সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য। গত ৩০বছর যাবত চলছে এই সড়কের নির্মাণ কাজ। কিন্তু শেষ হবে কবে।
জয়নাল আবেদিন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আলী মর্তুজা, বাদাঘাট বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রাশিদ ভূঁইয়া, কবির ভূঁইয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- জনগুরুত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বাড়বে। উপজেলাবাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।
তাহিরপুর উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ, পল্লী চিকিৎসক সুলতান মাহমুদ, যাত্রীবাহী মোটর সাইকেল চালক হান্নান, সুমন মিয়া বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে এই উপজেলার মানুষ যুগযুগ ধরে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির এ প্রসঙ্গে বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বিষয়ে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পাঠিয়েছি,প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলেই এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।