|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও ||
ইট তৈরির কথা উঠলেই আমরা মনে করি সেই কাদামাটি গড়ে তা নির্দিষ্ট কাঠের ফর্মায় ফেলে নির্দিষ্ট মাপের ইট তৈরি করে তা কাঠ ও কয়লায় পুড়িয়ে লাল করা। আর বিস্তর পরিমান এই মাটির যোগান আসে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে। জ্জালানি আসে গাছ গাছালি, গাড়ির পুরোনো টায়ার ও রাবার থেকে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়ে পরিবেশ। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইটভাটায় এসবের ব্যবহার নেই। এখানে এই প্রথম ফ্লাই অ্যাশ (কয়লা দহনে সৃষ্ট বিশেষ ছাই), সিমেন্ট, বালু ও পাথরকুচি দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভাইব্রো ক্যাভিটি যন্ত্রের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইট।
এই ইট তৈরি করছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শিবগঞ্জ পারপুগী গ্রামের রাজ্জাক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বাবলু সুপার ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রি লিমিডেট। তাদের দাবি, দেশে তারাই প্রথম এই ফ্লাই অ্যাশের মাধ্যমে ইট তৈরি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ঘরের ভেতরে বসে আছেন একজন অপারেটর। তিনি পরিচালনা করছেন একটি মেশিন। টিপছেন বিভিন্ন সুইচ। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফ্লাই অ্যাশ, বালু, সিমেন্ট ও পাথরকুচি এসে মিশে যাচ্ছে মেশিনে। এরপর যন্ত্রের চাপে তৈরি হয়ে বের হচ্ছে একই আকারের ইট।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত বছর থেকে তারা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও ফ্লাই অ্যাশের মাধ্যমে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভাইব্রো ক্যাভিটি যন্ত্রের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ইট বানাচ্ছেন। এখানে ইট তৈরি করতে আনুপাতিক হারে ৪০ শতাংশ ফ্লাই অ্যাশ, ৪০ শতাংশ বালু, ১৫ শতাংশ সিমেন্ট ও ৫ শতাংশ পাথরকুচি ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনে ৭ থেকে ৮ হাজার ইট বানানো হয় এই ভাটায়। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন এই ভাটায়।
কারখানা শ্রমিক রাজু হাসান, ফরিদুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, এর আগে আমরা যে ভাটায় কাজ করতাম, সেখানে ইট পোড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হতো। পারিশ্রমিক পেতাম ৩০০ টাকা করে। পরিশ্রমও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বাবলু সুপার ব্রিকসে কাজের পরিমাণ অনেক কম। এখানে পরিশ্রম তেমন নেই বললেই চলে। প্রতিদিন সকালে আসি, বিকেল চারটায় চলে যাই।
বাবলু সুপার ব্রিকসের প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার মোশারুল ইসলাম বলেন, আমরা আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ৮ ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ইট তৈরি করে থাকি। একটি ইট উৎপাদন করে ১৫ থেকে ২০ দিন এটিকে কিউরিং করতে হয়। প্রতিদিন পানি দিতে হয়। এরপর অটোমেটিক মেশিনে এটি শুকিয়ে গেলে এটা বিক্রি করে থাকি। আমাদের ভাটায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এই ইটভাটার কারণে এলাকার অনেকের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ হয়েছে।
রাজ্জাক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কারখানার মালিক হাবিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, তখন আমি ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করি। একবার ভারতে গেলে পরিবেশবান্ধব ইটের ব্যবহার নজরে পড়ে। এরপর আমি দেশে এসে ঠাকুরগাঁওয়ে ফ্লাই অ্যাশ, বালু, সিমেন্ট ও পাথরকুচি দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইট তৈরির কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটি দেশের প্রথম একটি প্রকল্প, তাই মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে। অন্যান্য ভাটার ইটের চেয়ে আমার ইট আকারে বড় ও মসৃণ। আমরা সাধারণ ক্রেতাদের এই ইটের মান বোঝানোর চেষ্টা করছি। এই ইট দিয়ে যারা ঘর বানাচ্ছে, তাদের ঘরের সৌন্দর্য বাড়ছে। সব ধরনের নিয়ম মেনেই আমরা ভাটাটি চালু করেছি।