জামালপুরে তিনদিনেও কাজে যাননি চিকিৎসকরা বাড়ছে জনবিক্ষোভ

রোগির মৃত্যুতে স্বজনদের হাসপাতাল ভাংচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদে গেলো তিনদিনেও কাজে যাননি জেলার সদর হাসপাতালসহ ৬টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালপুর ||

রোগির মৃত্যুতে স্বজনদের হাসপাতাল ভাংচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদে গেলো তিনদিনেও কাজে যাননি জেলার সদর হাসপাতালসহ ৬টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। প্রতিবাদে শহরের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকেরাও দিচ্ছেন না চিকিৎসা সেবা।এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। সাধারণ মানুষ বলছেন, করোনা আর শীতজনিত অসুখবিসুখের মধ্যে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তাদেরকে যারপর নাই বিপদে ফেলেছে।এদিকে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু এবং রোগীর স্বজনদের উপর হামলার প্রতিবাদে ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শহরের বকুলতলা চত্বরে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সড়ক অবরোধ করে  বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রোগীর স্বজনসহ এলাকাবাসী।

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, কোন পুর্ব ঘোষনা ছাড়াই চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করায় বিপাকে পড়েছেন তারা। শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে জামালপুর জেলার ৭ উপজেলাসহ প্বার্শবর্তি শেরপুর জেলার বহু মানুষ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কর্মবিরতির কারনে দূর্ভোগে পড়েছেন তারা।

রোববার থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকদের কর্মবিরতি মঙ্গলবারও চলেছে। টানা তিনদিন কাজ বন্ধ করে কর্মসুচি পালন করছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার ২৯শে ডিসেম্বর সকাল থেকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক আসেননি। সেবা না পেয়ে অনেক মূমূর্ষ রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা।

তবে হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অনড় আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যেই ৪ দফা দাবি আদায়ে আরো কঠোর কর্মসুচির র্হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসক নেতারা।

শহরের গেটপাড় এলাকার ২৫ বছর বয়সি গর্ভবতি সুইটি বেগম। হাসপাতালে এসেছিলেন পেটের ব্যথা নিয়ে। তিনি বলেন, পেটে অসহ্য ব্যথা নিয়ে  হাসপাতালে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখাতে পারি নাই। ক্লিনিকগুলোতেও ডাক্তার বসছেন না। এখন কই চিকিৎসা নিমু?

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, রোগীকে জিম্মি করে তো চিকিৎসকরা এভাবে কর্মবিরতি করতে পারেন না। এটা শুধু বেআইনিই নয়, অমানবিকও। দ্রুত চিকিৎসকদের উপর হামলাকারীদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় কর্মবিরতি চলছে। এই নিয়ে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। চিকিৎসকদের ৪দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু এবং রোগীর স্বজনদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমেদ, সাবেক কাউন্সিলর বিজু আহমেদ, এডভোকেট বাবর আলী খান, বিষ্ণু চন্দ্র মন্ডল ও পারুল বেগমসহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, ডাক্তারদের অবহেলায় আমাদের রোগী করিমন নেছার মৃত্যুর পর ইন্টার্ন ডাক্তাররা হামলা করেছে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসীর ওপর। আবার হামলার অভিযোগ করে রোগীর স্বজনদের নামে মিথ্যা মামলাও করেছে। অবিলম্বে দোষী ডাক্তারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি, সাইদুর ও শহিদুরের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। তা না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসুচির আলটিমেটাম দিয়েছেন বক্তারা।

 

সংবাদ সারাদিন