|| সোলায়মান হোসেন, জামালপুর থেকে ||
জামালপুর সদর উপজেলার কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং ভোগান্তিতে পড়েছে প্রকল্প এলাকার মানুষ। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা এবং প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করবার ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়- ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের আওতায় গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন ২য় পর্যায় নন-সোলার প্রকল্পের জন্য জামালপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১২টি প্রকল্পের জন্য ১৬০ দশমিক ৫৫৫ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৩৩ টাকা দরে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫ টাকা।
চলতি বছরের জুন মাসে সবগুলো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন অভিযোগ উঠেছে। জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নারিকেলি বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করতে ৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরাকরি দরে এই পরিমাণ গমের দাম ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৪ঠা জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি এবং রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় মানুষ।
স্থানীয় আবু বক্কর মো. সিদ্দিক জানান, গত ৪ থেকে ৫ বছরেও বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তার কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে মাঝে মধ্যেই দূর্ঘটনা ঘটছে। বর্ষায় ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।
আরেক বাসিন্দা ষাটোর্ধ সুরুজ্জামান বলেন, উল্লেখিত রাস্তাটির কাজ করানো হয় না অনেকদিন। আমরা শুনি যে, অনেক বরাদ্দ আসে। কিন্তু সেগুলোর কোনো কাজ দেখি না আমরা। তিনি দ্রুত এই রাস্তা মেরামতের সংস্কারের দাবি জানান সুরুজ্জামান।
স্থানীয়দের এমন অভিযোগ ও দাবি সম্পর্কে প্রকল্পের সভাপতি ও কেন্দুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জুর কাছে জানতে ৪ঠা জুলাই দুপুরে তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি জানান, এই প্রকল্পের বিষয়ে তার জানা নেই এবং পরের দিন যোগাযোগ করতে বলেন। ৫ই জুলাই বেলা ১২টায় আবারও তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন এবং প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষার পরও তিনি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন কর্মচারী জানান, চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যোগসাজোশ করে প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ তুলে নিয়েছেন।
এদিকে শরিফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডেংগার গড় হুছির বাড়ি থেকে সুরুজ বাজার হয়ে সিংগাবিল পর্যন্ত রাস্তা পুন:সংস্কারের জন্য ২৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারি দরে যার দাম ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৬ই জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি এবং রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে ভোগান্তির শেষ নেই সেখানকার বাজার এলাকার বাসিন্দাদের।
সুরুজ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী হুসেন আলী জানান, রাস্তার বেহাল দশায় তাদের ব্যবসারও দশা বেহাল। ক্রেতারা সহজে এমুখো হতে চান না। ব্যবসার কাজে ভারী মালামাল পরিবহনেও অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। তারা অতিদ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান।
সিংগার বিল এলাকার মো. লিটন মিয়া বলেন, রাস্তা খারাপ থাকায় কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। মাঝে মধ্যেই দূর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে এলাকাবাসী কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলম আলী জানান, প্রকল্পের কিছু কাজ করা হয়েছে। সামনে আরো কাজ করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অপরদিকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাঁশচড়া এসবিজি মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মূল্যের ৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানায় স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে বাঁশচড়া এসবিজি মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পের জন্য অনেক আগেই বরাদ্দ এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ না পাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, তার এ নিয়ে কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন জানান, এ ধরনের কোন অভিযোগ নিয়ে তার কাছে এখনো কেউ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে প্রকল্পে কাজ কম করা হয়েছে, প্রয়োজনে সেখানে আবারও কাজ করানো হবে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ ঠেকাতে এবং প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত তদারকি করছে বলে জানান তিনি।