জামালগঞ্জে শীতের পিঠা বিক্রিতেই সংসার চলছে পঞ্চাশ পরিবারের

হরেক রকম ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার মজাটাই আলাদা। শীতের পিঠা বাঙালিদের জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার। শীত আসলেই প্রতিটি হাট-বাজারের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসা পিঠা বিক্রির বাহারী পসড়া দোকানে চিতর পিঠার সাথে হরেক রকমের ভর্তার সমারোহ এ সকল দোকানে।

|| মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, হাওরাঞ্চল (সুনামগঞ্জ) থেকে ||

পিঠা শুধু লোকজ খাাবার নয়, এটা বাংলা ও বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। আধুনিকতার ছুঁয়ায় পারিবারিক ও সমাজ জীবন থেকে পিঠা তৈরির আয়োজন কমে যাচ্ছে। তবে এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একশ্রেণির মৌসুমী নারীপুরুষ ব্যবসায়ী।

এখন আর বাড়ি বাড়ি নয়, প্রতিদিন জামালগঞ্জের হাটে-বাজারে বৈকালিক পিঠার দোকানে পিঠাপ্রিয় মানুষের ভীড় দেখা যায়। পথের পাশেই তৈরি হচ্ছে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিশাপটা পিঠা। পথচারীরা গরম পিঠার স্বাদ নিয়ে রসনা তৃপ্তি নিচ্ছে। অনেকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন, কেউ বা বাসা-বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্য। বিক্রি ভালো হওয়ায় পিঠা বিক্রেতারা ভীষণ খুশি।

প্রতি বছর শীতের আগমনে এ অঞ্চলের দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী একশ্রেণী নারীপুরুষ পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাটে-বাজারে পথের পাশে বসে পড়েন। কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পিঠার ব্যবসা। এতে আয় রোজগায় ভালো হওয়ায় তাদের সংসারও ভালো চলে। পুরুষ ও নারীরা পিঠা তৈরিতে পারদর্শী। পিঠা বিক্রেতা নারীদের দোকানে ক্রেতাদের ভীড় অনেক বেশি।

হরেক রকম ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার মজাটাই আলাদা। শীতের পিঠা বাঙালিদের জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার। শীত আসলেই প্রতিটি হাট-বাজারের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসা পিঠা বিক্রির বাহারী পসড়া দোকানে চিতর পিঠার সাথে হরেক রকমের ভর্তার সমারোহ এ সকল
দোকানে।

ঘরের গন্ডি ছাড়িয়ে পিঠা বিক্রি করে অনেক নারী-পুরুষ করছেন বাড়তি আয়। রাস্তার মোড়ে মোরে অনেক রাত পর্যন্ত চলে শীতের এই পিঠা বিক্রি। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায় শীতের পিঠার কদর।

দোকানীরা চোলা থেকে একেকটি পিঠা নামানোর সাথে সাথেই আগে ছুঁ মেরে হাতে তুলে নেওয়ার নিশ্চুপ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায় ক্রেতাদের মাঝে। গুড়, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি বাপা পিঠা, পুলি পিঠাসহ বাহারী পিঠা সব তৈরি হয় এসব দোকানে। চিতই পিঠার সাথে চিংড়ি, শুটকি, সরিষা ও ধনেপাতাসহ নারা রকমের সুস্বাদু ভর্তা জিহ্বায় পানি আনছে ভোক্তাদের।

বেশীর ভাগ পিঠা বিক্রেতারা সারাদিন অন্য কাজ শেষে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে বাড়তি আয় করে সংসার চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। সহজেই হাতের কাছে পিঠা পাওয়ায় সন্তুষ্ট ক্রেতারা আর বিক্রেতারাও খুশি ভালো লাভ পাওয়ায়।
ক্রেতা শাহআলম বলেন, বাড়িতে সবসময় পিঠা তৈরি করা সম্ভব হয় না। দোকানগুলোতে সুস্বাদু পিঠা তৈরি করে, তাই দোকান থেকে প্রতিদিন পিঠা খাই।

উপজেলায় পিঠা তৈরি ও বিক্রি করে অর্ধশত লোক সংসার চালাচ্ছে। শীতে পিঠা তৈরি মৌসুমী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সারা বছর ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান চলে না। তখন তারা অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে। সাচনা বাজারে সত্যরঞ্জন দাস বলেন, শীত মৌসম এলেই আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে পিঠা খাই। বাড়িতেও পরিবারের জন্য নিয়ে যাই।

জামালগঞ্জ সদরের পিঠা বিক্রেতা আনোয়ার আলী বলেন, আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষি কাজ করি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করি। আমার পিঠা জামালগঞ্জের প্রতিটি মানুষ তৃপ্তি সহকারে খায়। কেউ কেউ বাসায় নিয়ে যায়। পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন ৪০০-
৫০০ টাকা আয় হয়।

সাচনা বাজারের স্বামী পরিত্যাক্তা আলেয়া বেগম (৩৫) বলেন, স্বামী না থাকায় বাজারে এসে শীতের পিঠা বিক্রি করি। শীতে পিঠার চাহিদা থাকায় পিঠা বিক্রিতে সৃজনাল পেশা হিসেবে নিয়েছি। বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে যে লাভ হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ
চলে।

আলেয়া আরও জানায়, শীতের ৬ মাস পিঠা বিক্রি করি, অন্য ছয় মাস চা বিক্রি করে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সরসারের খরচ চালাই। প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা লাভ হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন