জামালগঞ্জে ‘লকডাউন’ নিয়ে লুকোচুরি খেলা

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) ||

‘ ভাই সকাল থেকে পান খাই না। মুখ যেন কেমন শুকাইয়া গেছে। তাড়াতাড়ি একটা পান দেন। আবার কখন পুলিশ আইয়া পড়ব।’ সাচনা বাজারের পান-সিগারেটের দোকানদারকে এভাবে বলছে এক যুবক। দোকানদারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বেশি সময় নাই। অখনই বন্ধ কইরা দিমু। দেখস না পুলিশ ঘুরতাছে।’ অথচ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী চলা কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখার কথা থাকলেও পান-সিগারেটের দোকান খোলা থাকার কথা না। একইভাবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হতেও বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু সে কথায় অনেকেই কান দিচ্ছেন না। নানা অজুহাতে তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন।

পথচারী একজনকে বলতে শোনা যায়, যেভাবে লকডাউন তাতে বের হওয়ার কোন উপায় নাই। পাশেই থাকা আরেক ভদ্রলোক বলছে, বুদ্ধি থাকলে সবই সম্ভব। পথচারী বলল, কী বুদ্ধি? ভদ্রলোক বলল, পকেটে একটা ডাক্তারের পেসক্রিপশন রাখবা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়লেই বলবা, ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতে যাই। বেশ তোমাকে আর জরিমানা করবে না।

প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন মানুষকে জরিমানা করছে, তবু উপজেলাবাসীর হুশ ফেরেনি। রোববার ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই স্বাভাবিক সময়ের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে মাস্ক ছাড়া আড্ডা জমিয়েছে। অনেকে মাস্ক নামমাত্র মুখে লাগিয়ে রাখছে। প্রশাসনের লোকজন দেখলেই মাস্ক উপরে তুলছে। মূল সড়কের ফার্মেসী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন গলির ভেতর এরকমই সব দোকান খোলা রয়েছে। বিশেষ করে সেলুন, টেইলারিং দোকান থেকে শুরু করে অন্যান্য দোকানপাট খোলা রয়েছে। কেউ কেউ দোকানের সামনে আলু, পেঁয়াজ, রসুন রেখে প্রশাসনকে বোঝাতে চাচ্ছে যে, এটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান। আবার কেউ কেউ পুলিশের ভয়ে অর্ধেক পার্ট খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

সাচনা বেহেলী রোডে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন নামের এক লোক জানায়, সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই একটু বাহির হয়েছি। মাস্ক কই, জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, মাস্ক ছিল, ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছি। একই বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেইলারের সাথে কথা হলে সে জানায়, দোকান বন্ধ রাখলে পেট চলবে কী করে? এটাই আমার একমাত্র আয়ের পথ। জানি ঝুঁকিপূর্ণ, তবু পেটের দায়ে দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে বিধি নিষেধের প্রথম তিনদিন রাস্তায় রিক্সা, অটোরিক্সার সংখ্যা কম দেখা গেলেও রবিবার বেশ কিছু রিক্সা, অটোরিক্সা রাস্তায় চলতে দেখা গেছে। কোন কোন রিক্সাচালক বলছে, আজ তাদের আয় বেশি হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে জানায়, আজ অন্য কোন গাড়ি না থাকায় অনেক যাত্রী পেয়েছি। ভাড়াও একটু বেশি নিয়েছি। যাত্রীরা জানে, অন্য গাড়ি না থাকায় আমার রিক্সাই যাইতে হইব। তাই যত চাই ততই রাজি হয়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৩০০ টাকা রুজি হয়েছে।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর লোকজন বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করছে। তারা চলে যাওয়ার পর পরই আবার আগের মতোই চলাফেরাসহ ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, আমাদের লোকবল কম থাকায় সব জায়গায় এক সাথে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবু প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে জেল-জরিমানাসহ কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে।

সংবাদ সারাদিন