|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) ||
প্রায় ৮ বছর আগে মারা যান মোছাম্মৎ রাবেয়া বেগমের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম। মারা যাওয়ার আগে জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের বাজার হাঁটি গ্রামে প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী ২ ছেলে, ৩ মেয়ে নিয়ে ৫ শতক জমির উপর ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছিলেন বীর এই মুক্তিযোদ্ধা। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ায় তার একমাত্র মেয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সেই ঝুপড়ি ঘরে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন প্রথম স্ত্রী রাবেয়া বেগম। সরকারের কাছে একটি ঘর দাবি করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার এই স্ত্রী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ২ স্ত্রী সমান ভাগে ভাগ করে নিতেন। এভাবে চলছিল তাদের সংসার। রাবেয়া বেগমের ২ ছেলে, ২ মেয়ে। ২ ছেলে দিনমজুরের কাজ করেন এবং ২ মেয়েকে বিয়ে দিলেও সংসার চালাতে না পারার কারণে মায়ের কাছেই থাকেন তারা। সংসারে যা রোজগার হয় তা দিয়ে অভাব অনটনের মাঝে দিন পার করছেন তারা।
রাবেয়া বেগম বলেন, ৮ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে কোনরকম অভাব অনটনের মধ্যে চলছি। সংসারের উপার্জনক্ষম ছেলের রুজি কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। শীতে ঠান্ডা ও বর্ষায় ঘরের কয়েক জায়গা দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। এ পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য পাইনি। সবাই বলে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাও তোমার আবার কিসের সাহায্য। কিন্তু ভাতার ৬ হাজার টাকা একটি সংসার কিভাবে চলে আপনিই বলুন। আমরা গরীব মানুষ। আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা হলেও সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাই না। সরকারের কাছে আবদার যদি একটা ঘর করে দিত তাহলে সন্তানদের নিয়ে অন্তত শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারতাম।
রাবেয়া বেগমের বড় ছেলে দিনমজুর কামাল হোসেন বলেন, আমি জাফলংয়ে দিনমুজুরের কাজ করি। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গ্রামে আসলে নিজের বাড়িতে ঘুমানোর মতো কোন ঘর না থাকায় অন্যের বাড়িতে ঘুমাতে হয়। অর্থের অভাবে ঘর বানাতে পারছি না।
এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোট মেয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, স্বামীর বাড়ি না থাকায় বাবার বাড়িতে থাকি। আমাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়া একটা লেট্রিন ও টিউবওয়েল নাই। অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। কোন কারণে তাদের সাথে মনোমালিন্য হলে পানি দেয় না। তখন পুকুরের পানি খেয়ে থাকতে হয়। এ অবস্থায় খুবই কষ্টের মাঝে দিন কাটাইতাছি। সরকারের কাছে দাবি জানাই একটা ঘরসহ টিউবওয়েল যেন দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। আগামী ঘর আসলে তাদেরকে একটি ঘর ও টিউবওয়েল দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।