জামালগঞ্জে অবাধে চলছে মশারি ও বের জাল দিয়ে পোনামাছ নিধন

হালির হাওরের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন জানান, নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন ও মৎস্য সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্তরায়। হাওরে মাছ নিধনের কোন বিধিনিষেধ নেই। যতদিন পানি আছে ততদিন মাছ ধরবে মৎস্যজীবীরা। মৎস্য শিকারীদের কাছে বড় বা ছোট মাছ বলে কিছু নেই।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) ||

চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির পর এখন খাল-বিল, নদীনালায় ধরা পড়ছে মাছের পোনা। এভাবে না ধরলে আসছে  কিছুদিনের মধ্যেই মাছগুলো বড় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরইমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় হালির হাওর, পাগনার হাওর, শনির হাওর ও ধানকুনিয়া হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব হাওরে বিভিন্ন মৎস্যজীবীগণ বেরজাল ও মশারি জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ ধরছে। মৎস্যজীবীরা  জানান, গরীব হওয়ায় রুজির কোন উপায় না থাকায় এসব পোনা মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

হাওর এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খালবিলে বর্ষায় পানি ঢুকবার পথেই মাছ শিকারীদের ধুম পড়ে যায়। নদী থেকে খাল বিলে পানি ঢোকার পথেই বের ও মশারি জাল দিয়ে ডিমওয়ালা মাছ শিকার করা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মাছ শিকার। খুব সস্তায় গ্রামের হাটবাজারে এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাগনার হাওরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানের খাল ও নালার পানি দ্রুত গতিতে নামছে। পানি বের হওয়ার নালাগুলোতে বসানো হয়েছে মশারি দিয়ে তৈরি জাল। অন্যদিকে দুই নৌকায় এক সঙ্গে করে বের জাল দিয়ে পানি থেকে ছেকে তুলে আনা হচ্ছে ছোট-বড় মাছ।

হালির হাওরের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন জানান, নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন ও মৎস্য সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্তরায়। হাওরে মাছ নিধনের কোন বিধিনিষেধ নেই। যতদিন পানি আছে ততদিন মাছ ধরবে মৎস্যজীবীরা। মৎস্য শিকারীদের কাছে বড় বা ছোট মাছ বলে কিছু নেই।

সদরের বাসিন্দা সুলতান আহমদ জানান, বর্ষার শুরু থেকেই স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে প্রচুর ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কোনদিনও এসব মাছ বিক্রির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন অভিযান চোখে পড়েনি।

সাচনা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী করিম উল্লাহ বলেন, আগে সুনন্দা ম্যাডাম প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও ছোট ডিমওয়ালা মাছ পাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করতেন। এখন উনি ছুটিতে থাকায় অসাধু মৎস্যজীবীরা এসব ডিমওয়ালা মাছ বিক্রি করে যাচ্ছে। দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের কোন খবর নেই।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এ বলা আছে, চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত কেউ জুলাই থেকে ডিসেম্বর আবার আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটার ৯ ইঞ্চির নীচে থাকা কাতলা, রুই, মৃগেল, কালবাউস, ঘনিয়াসহ দেশী প্রজাতির মাছ নিধন করা যাবে না। চাষের উদ্দেশ্যে মাছ ধরতেও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে অনুমতি নিতে হবে। অন্যদিকে মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার যা তার চেয়েও কম পাশবিশিষ্ট জাল ব্যবহার করা যাবে না। আইন অমান্য করলে এক মাস হতে এক বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রানী বিশ্বাস বলেন, প্রচারপত্র বিলি ও মাছ শিকারিদের সঙ্গে পোনা মাছ নিধন বন্ধের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। এরপরও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত আছে। জামালগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা রানী মোদক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় অফিসের লোকবল সঙ্কটের কারণে এবং করোনা লকডাউনের জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তারপরও লকডাউন শেষ হলে জামালগঞ্জ গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ সারাদিন