|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রংপুর ||
জাতীয় পতাকা বিকৃতি ও অবমাননা করায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সহ ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। রংপুরের মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় বৃহস্পতিবার রাতে এই অভিযোগ করা হয়। অপরদিকে জাতীয় পতাকা বিকৃতি ও অবমাননার অভিযোগে ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ।
প্রসঙ্গত, গেলো ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয়দিবসের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-কর্মচারি স্বা্ধীনতা চত্তরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে প্রদর্শন করেন। এই পতাকার মাঝের লাল বৃত্তটি ছিল চারকোনা। সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গনমাধ্যমেও সচিত্র খবর প্রকাশ হলে তাও ব্রিবত করে গোটা জাতিকে।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন রাখেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারিরা শিক্ষিত হয়েও এমন ঘটনা কীভাবে ঘটালেন। তারা কি দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না এমন মন্তব্যও উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেরোবির এক শিক্ষক জানান, এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি আরো জানান, এ সব শিক্ষক প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জাহির করার জন্য ফটোসেশন করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে নেই কোনো দেশপ্রেম ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের দায়ের করা এজাহারে বলা হয়, গেলো ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে জাতীয় পতাকার নকশা পরিবর্তন করে সবুজের ভেতর লাল বৃত্তের পরিবর্তে চারকোণা লাল আকৃতির পতাকা বানিয়ে পোজ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এতে সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে। এবং তারা স্বাধীনতা স্মারক চত্তরে উপস্থাপন করে জাতীয় পতাকা মেঝেতে ও পায়ের নিচে স্পর্শ করে ছবি তুলেছে যা সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রদোহিতার অপরাধ। এতে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের হুকুমের আসামি হিসেবে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহক দায়ী করা হয়। লিখিত অভিযোগে অপর আসামিরা হলেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ও গনিত বিভাগের প্রধান হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পরিমল চন্দ্র বর্মণ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাসুদুল হক, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রহমতুল্লাহ।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধাতেও তাজহাট থানায় জাতীয় পতাকা বিকৃত ও অবমাননার দায়ে আরো একটি লিখিত অভিযোগ দেন বেরোবি ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ। অভিযোগে পতাকার লাল বৃত্তের বিকৃতি ও পায়ের নিচে লাগানোর অভিযোগ আনা হয়। এতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট তাবিউর রহমান প্রধানসহ ৯ শিক্ষককে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতারুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত চলছে৷ তদন্ত শেষে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাতীয় পতাকার এমন বিকৃতিতে ক্ষোভ জানান স্থানীয় পর্যায়ের মানুষ। তাদের মতে বিশব্বিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যদি জাতীয় পতাকার মান রাখতে না পারেন তবে এ লজ্জা সমগ্র জাতির। বৃহস্পতিবার বিকেলেই এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে রংপুর যুবলীগের ব্যানারে সেখানে আরো একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জাতীয় পতাকা বিকৃতির দায়ে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে বহিস্কারসহ প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানানো হয়।