চিলমারী থেকে পার্বতীপুর ট্রেনবন্ধে ভোগান্তি মানুষের

ট্রেনটি বন্ধ থাকায় রেলপথে যাতায়াতকারী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়াও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশী ক্ষতিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||

করোনা ভাইরাস, ড্রাইভার, ইঞ্জিন স্বল্পতা ও স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণ দেখিয়ে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে চিলমারী থেকে পার্বতীপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কমভাড়ায় সহজেই ট্রেনে চিলমারী’র রমনা থেকে পার্বতীপুর ও পার্বতীপুর থেকে চিলমারী’র রমনা যাতায়াত করতে সুবিধা হতো এসব যাত্রীদের। এই ট্রেনটি বন্ধ থাকায় রেলপথে যাতায়াতকারী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়াও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশী ক্ষতিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৮ই মার্চ দুপুরে চিলমারী’র রমনা থেকে পার্বতীপর ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। এখনও বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। কবে থেকে আবারও নিয়মিত ভাবে চিলমারী-পার্বতীপুর পথে ট্রেন চালু করা হবে এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগন কেউই পরিস্কার করে কিছু বলতে পারছেন না।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

রেল কর্তৃপক্ষের সুত্র মতে, ১৯২৮ সালের ২রা আগষ্ট বন্দর নগরী চিলমারী থেকে প্রথম রেলপথ চালু হয়। তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারী’র রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪৩ কিলোমিটার রেলপথ পড়ে কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে। সে সময় যাত্রীদের সুবিধার্থে এই ৪৩ কিলোমিটার রেলপথে স্থাপন করা হয় ৮টি স্টেশন।

কুড়িগ্রাম রেলপথ চালুর পর পার্বতীপুর-রমনা রেলপথে সকালে ও সন্ধ্যা মিলে ২টি ও লালমনিরহাট-রমনা পথে দুপুরে ও রাতে ২টিসহ মোট ৪টি ট্রেন চালু ছিল। ২০০২ সালের দিকে হঠৎ করে পার্বতীপুর- রমনা রুটে ১টি ও লালমনিরহাট-রমনা রেল পথের দুটি ট্রেনসহ মোট ৩টি ট্রেন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই একটি ট্রেন পার্বতীপুর-রমনা রুটে সকালে রমনা এসে তিস্তা গিয়ে ফের দুপুরের ট্রেন হয়ে চলাচল করতো।

চিলমারী বন্দর নগরীর ব্যবসায়ী গাওছুল হক, ফিরোজ, সুইট, সোহেলসহ আরো অনেকেই বলেন, কম খরচে নিরাপদে বিভিন্ন মালামাল ট্রেনে পরিবহণ করতে পারতাম। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও সিএনজি দিয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। যার ফলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাসহ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত যাত্রীরা ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়েছি।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

এ বিষয়ে জেলা রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন বলেন, গত ১৭ই জানুয়ারি সরকারি রেলপথ পরিদর্শক অসীম কুমার তালুকদার কুড়িগ্রামে এসেছিলেন। রাজারহাট স্টেশনে তার সাথে দেখা করে ট্রেনটি চালুর জন্য স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

এদিকে, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বর্তমানে বুধবার বাদে প্রতিদিন কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস যাতায়াত করছে। এছাড়া সন্ধ্যায় রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী নিয়ে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত একটি শাটল ট্রেন যাতায়াত করছে।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ জানান, ইঞ্জিন, ইঞ্জিন চালক, স্টেশন মাস্টার এবং পয়েন্টম্যান সংকটের কারণে ওই সেকশনে ট্রেন চালু করার সক্ষমতা এ মুহূর্তে নেই। তবে চেষ্টা চলছে। জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য সংকট সমাধান হলে পুনরায় ওই সেকশনে ট্রেনের চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে।

 

সংবাদ সারাদিন