|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালপুর ||
জামালপুরে শুধু অটোবাইক চালক-শ্রমিকদের কাছ থেকেই মাসে চাঁদা নেওয়া হয় দেড় কোটি টাকা। বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে এই চাঁদা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির শিকার যারা তারা বলছেন, শ্রমিকের কল্যাণের নাম দিয়ে বিপুল অঙ্কের এই চাঁদা নেওয়া হলেও শ্রমিকের কল্যাণেই তা ব্যয় করা হয়না। চাঁদার এসব টাকা শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নেতাদের পকেটে।
অটো বাইক চালকদের অভিযোগ, জামালপুর পৌরসভা এলাকাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার অটো বাইক চলাচল করে। জামালপুর শহরে ৬টি পয়েন্টসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ শত পয়েন্টে অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে প্রতি পয়েন্টে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিদিন একটি অটো বাইক চালককে চাঁদা দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। চাঁদা না দিলে অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নিয়োজিত চাঁদাবাজরা লাঠি দিয়ে গাড়ীতে বাড়ি দেয়-এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় চালকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে। এতে যাত্রীরা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। প্রকাশ্য চাঁদাবাজি চললেও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন দেখেও তা দেখে না।
বেশ কয়েকজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি দলের একজন শীর্ষ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এসব চাঁদাবাজি চলছে। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হতো ২০ টাকা। করোনার কারনে চাঁদাবাজরা চাঁদার পরিমান অর্ধেক করেছে। এখন প্রতি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় ১০ টাকা। পয়েন্টে পয়েন্টে চাঁদাবাজিরকারনে অটো বাইক চালকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির জেলার বিভিন্ন স্থানে শাখা কমিটি দেওয়ার নামেও হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।
জামালপুর শহরের প্রধান সড়কে গেইটপাড়ে কথা হয় অটো চালক হুরমুজ আলীর সাথে। তিনি বলেন, অটো বাইক চালিয়ে সারাদিনে ইনকাম হয় ৭ থেকে ৮শ টাকা। এর মধ্যে অটোর মালিককে দিতে হয় ৩০০ টাকা। প্রতিদিন অটোর ব্যাটারি চার্জের জন্য ব্যয় হয় আরো ১০০ টাকা। এর মধ্যে চাঁদাবাজদের দিতে হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সারাদিন কষ্ট করে ঘরে টাকা আসে ৩ থেকে ৪শ টাকা। এ টাকা দিয়েতো আর সংসার চলে না।
শহরের তমালতলায় কথা হয় অটো চালক বিল্লাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হলেও কোন মহল কিছুই বলেন না। সবার মুখ বন্ধ কেন। আসলে গরীবের পক্ষে কেউ নাই। চাঁদাবাজরা মনে হয় সবাইকে ম্যানেজ করেছে।
অটো চালক কাজিম উদ্দিন বলেন, শ্রমিকের কল্যাণের নামে চাঁদাবাজি হলেও কোন শ্রমিকের সমস্যা হলে বা দুর্ঘটনা হলে চাঁদাবাজদের কাউকে খোঁজে পাওয়া যায় না। শ্রমিকের কল্যাণের কথা বলে চাঁদা তুলে তারা নিজেরা মোটা তাজা হচ্ছে। সরকারি দলের শীর্ষ একজন নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এসব চাঁদাবাজি করছে সবার নাকের ডগায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন সরকারি দলের শীর্ষ ওই নেতা এর সাথে জড়িত না। তবে তিনি আবার কিছু বলেনও না। বিষয়টি রহস্যজনক।
বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি রেজিঃ নং এস-১১৩৮৭ জামালপুর জেলা শাখার প্রধান কার্যালয় করা হয়েছে শহরের রানীগঞ্জ বাজারে পৌরসভার সুপার মার্কেটে। এখান থেকে পরিচালিত হয় জেলার সব জায়গার অটো বাইকের চাঁদাবাজির কার্যক্রম। বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি পদে আছেন জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোজাম্মেল হক। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন পৌর শ্রমিক লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য বেলাল হোসেন। চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি মোজাম্মেল হক।
তবে অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুরো জেলায় তারা চাঁদাবাজি করেন না। শহরের ৬টি পয়েন্টে তারা রসিদ দিয়ে চাঁদা নেন। রসিদ বই বিক্রি করা হয়। ১০০ পাতার প্রতিটি বই বিক্রি করা হয় ৩০০ টাকা করে। চাঁদার টাকা অটো চালকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। কোন অটো দুর্ঘটনা হলে বা কোন ঘটনায় থানা পুলিশ আটক করলে চাঁদার টাকা ব্যয় করে সমস্যা সমাধান করা হয়। কোন শ্রমিক মারা গেলে বা দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদেরকেও অনুদান দেওয়া হয়।
অটো বাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জোর দাবি জানানজামালপুর জেলার অটো বাইক চালকরা।