|| মাহফুজার রহমান মাহফুজ, জয়পুরহাট থেকে ||
জয়পুরহাটে বাস-ট্রেন সংঘর্ষে ১২ বাসযাত্রী নিহত ও ৫জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৭টার দিকে সদরের পুরানাপৈল অরক্ষিত রেলগেটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের প্রথমে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে গুরুতর আহত ৫ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে দুর্ঘটনায় রেল চলাচল বন্ধ থাকলেও আটঘন্টা পর তা আবার চালু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা ও আহতদের চিকিৎসার সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা উত্তরা ট্রেনটি রাজশাহীতে যাচ্ছিল। অপরদিকে জয়পুরহাট থেকে হিলি যাওয়ার পথে বাসটি পুরানাপৈল রেলগেটে লাইনে যাওয়ামাত্রই ট্রেনটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এসময় ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ১২ জন মারা যান। আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পর সংকটাপন্ন ৫ জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে বাসটির সুপারভাইজার জিয়া মারা যান। সুপারভাইজার জিয়ার বাড়ি জেলার পাঁচবিবির জিয়া মোড়ে। তার বাবার নাম মৃত মিরাজ হোসেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন শহরের চিত্রাপাড়ার মৃত মোন্ডা আলীর ছেলে রেজাউল করিম (৬০), জেলার পাঁচবিবির আটুল গ্রামের আলতাব হোসেনের দুই ছেলে সানোয়ার হোসেন বাবু (৩০), আরিফুর রহমান রাব্বি (১৮), আটাপাড়ার মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম নাসিম (২৮), সদরের হিচমী দক্ষিনপাড়ার মৃত মানিক হোসেনের ছেলে রমজান আলী (৩৬), কুঠিবাড়ীর শরিফুল ইসলামের ছেলে আ. লতিফ (২৯), আক্কেলপুরের চকবিলা গ্রামের দুদু কাজির ছেলে সাজু মিয়া (২৬), ক্ষেতলালের ইটাখোলার মংলার ছেলে সুমন (৩৫), নওগাঁর রানীগগরের বিজয়কান্দির গ্রামের গোড়া মিয়ার ছেলে বাবু (৫৫), টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের মাটিকাটা গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস (৬০)।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির-পিপিএম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টরা উদ্ধার কাজ করছে। রেলওয়ের জিআরপি পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারাও ঘটনাস্থলে এসেছে। তারা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। জিআরপি সৈয়দপুরের এসআরপি সিদ্দিকী তানজিরুল রহমান বলেন, এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে এসেছি, উদ্ধার কাজ চলছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা তদন্ত কমিটি করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রেলওয়ের জিআরপি পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, রেল ক্রসিং গেট না নামানোর কারণে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনাটি ঘটতে পারে জানান তারা। ঘটনা কবলতি বাসরে বেঁচে যাওয়া হেলপার সোহেল হোসেন অভিযোগ করে বলনে, “দুর্ঘটনার সময় ওই রেলগেটে কোনো গেটম্যান ছিল না।”
তদন্ত কমিটি
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পুরানাপৈলে পার্বতীপুর-রাজশাহীগামী ৩২ নম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় যাত্রীবাহী বাসের ১২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) নাসির উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন- পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) আশিষ কুমার মণ্ডল, পাকশী বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার শাকিল আহমেদ।
শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে জয়পুরহাট শহরের পুরানাপৈলে লেবেল ক্রসিং রেলগেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বৈধ লেভেল ক্রসিং থাকলেও গেটম্যান না থাকার কারণে মূলতঃ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদূল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পরপরই পার্বতীপুর লোকোসেড ও ঈশ্বরদী লোকাসেড থেকে রিলিফ ট্রেনের উদ্ধার কর্মীরা গেছেন। প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।