কোস্টাগার্ডকে জাটকার তথ্য দেয়ার অভিযোগে শ্রমিককে মারধর

ভোলার মনপুরা উপজেলায় মাছের আড়তের কাজ ছেড়ে দেয়ায় কোস্টাগার্ডকে জাটকার তথ্য দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে এনে মো. আলাউদ্দিন নামের এক মৎস্য শ্রমিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ভোলা ||

ভোলার মনপুরা উপজেলায় মাছের আড়তের কাজ ছেড়ে দেয়ায় কোস্টাগার্ডকে জাটকার তথ্য দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে এনে মো. আলাউদ্দিন নামের এক মৎস্য শ্রমিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই শ্রমিক গুরুতর আহত হয়ে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহত শ্রমিক উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরজ্ঞান গ্রামের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার ১১ই ফেব্রুয়ারি সকালে ভোলার একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে মনপুরা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাবুল মাতাব্বরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন শ্রমিক আলাউদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে আলাউদ্দিন আরো জানায়, সে পেশায় একজন মাছের আড়তের শ্রমিক। চার বছর ধরে সে হাজিরহাট মাছ ঘাটের বাবুল মাতাব্বরের মাছের আড়তে মাসিক ১০ হাজার টাকায় শ্রমিকের কাজ করে আসছে। কিন্তু ১০ হাজার টাকায় তার সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাই সে গত বাবুল মাতাব্বরকে বেতন বাড়াতে বলে। কিন্তু বাবুল মাতাব্বর বেতন বাড়ানোর কথা বলে ঘুড়াতে থাকে।

এক পর্যায় মাসিক বেতন দিতেও ঘড়িমসি করতো। এক পর্যায়ে সে গত এক বছর ধরে একই ঘাটের মতিন হাজির আড়তে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে আসছে। মতিন হাজির আড়তে কাজ নেয়ায় বাবুল মাতাব্বর বিভিন্ন সময়ে আলাউদ্দিনকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আলাউদ্দিন কাজ শেষে মতিন হাজির আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এ সময় বাবুল মাতাব্বর, তার ভাই সামাদ মাতাব্বর ও মিজান মাতাব্বর তাকে এলোপাথারি মারধর শুরু করে। এবং তারা আলাউদ্দিনকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, সে কোস্টগার্ডকে তথ্য দিয়ে তাদের আট লাখ টাকার মাছ ধরিয়ে দিয়েছে। সে টাকা দিতে বলে তারা। এক পর্যায়ে তাদের অত্যাচারে মাটিতে পড়ে গেলেও তারা আলাউদ্দিনকে মারধর করতে থাকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা গরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠায়।

আহত আলাউদ্দিন আরো জানায়, গত কয়েক মাস ধরে মনপুরার কোনা ব্যবসায়ীর মাছ কোস্টগার্ড জব্দ করেনি। তাদের আড়ৎ থেকে চলে আসায় তারা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করে। এমনকি তারা পূর্বেও এরকম অনেক শ্রমিককে মারধর করেছে। কিন্তু বাবুল মাতাব্বর মনপুরা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সে ও তার ভাইয়েরা ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এসকল কাজ করে যাচ্ছে। আমি এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ ব্যাপারে বাবুল মাতাব্বর মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, আলাউদ্দিনকে গত বর্ষা মৌসুমে আমার গদি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। সে আমিসহ আরো পাঁচজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রশাসনকে আমাদের ব্যাপারে তথ্য দেয়। এজন্য মঙ্গলবার রাতে ব্যবসায়ীরা তাকে আটক করে। পরে আমি গিয়ে কয়েকটি চর-থাপ্পর দিয়ে সরিয়ে দেই। আমি না থাকলে ব্যবসায়ীরা তাকে মেরে ফেলতো।

মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আলাউদ্দিন মাছ ঘাটের শ্রমিক। তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো মামলা দেয়নি। মামলা দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ সারাদিন