|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বিরোধিতার মধ্যে শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়।
কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যার পর ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমণ্ডিতে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে । এসময়ে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সমাবেশে বলেন, “পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই গুটিকয়েক উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে হবে। যারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় নয়।” রোববার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, “একাত্তরে এই মৌলবাদী অপশক্তিকে মুক্তিযোদ্ধারা জবাব দিয়েছে, এখন আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। তারা আবার সাম্প্রদায়িক উগ্রতা দেখাতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।” তিনিও রোববার মহানগর উত্তরেরর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এরপর সেখানে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মিছিল থেকে ‘একটা একটা শিবির ধর/ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান’- প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবু বলেন, “ভাস্কর্য ভাংচুর এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আগামীকাল সারা দেশে আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করব।”
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। সংগঠনের সভাপতি সমীর চন্দের নেতৃত্বে মিছিল হয়। মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘হাটহাজারী ঘেরাও হবে/মামুনুল হককে ধরা হবে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই/ মামুনুল হকের ফাঁসি চাই’, প্রভৃতি স্লোগান দেন। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সমীর চন্দ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় মৌলবাদী শক্তিকে পরাজিত করে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, এবারও এই মৌলবাদী শক্তিকে পরাজিত করে দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় ও গ্রামে গ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করব। সারা বাংলাদেশের কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এই মৌলবাদী শক্তিকে পরাজিত করবে।”
এরপর সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “যারা ভাস্কর্য নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের পিঠের চামড়া থাকবে না।”
তিনি বলেন, “যারা রাতের অন্ধকারে চোরের মতো জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছেন, দিনের আলোয় পারলে সামনে আসেন, যদি আপনাদের এত ঈমানী শক্তি থাকে।”
হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও তার অনুসারীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, “জাতির পিতার উপহার দেওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে যদি আপনারা কোনো অরাজকতা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু গতদিন বলেছিলাম আবারও বলছি- কান ধরে উঠবস করেও কিন্তু দিশা পাবেন না। একজনের পিঠের চামড়াও কিন্তু থাকবে না। তিনি বলেন, “যারা মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, তাদের উদ্দেশ্য আমরা বুঝে গেছি। আপনারা আপনাদের পেয়ারের পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। পাকিস্তানের ভালোবাসা এখনও ছাড়তে পারে নাই।”
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে রোববার সারা দেশের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “এর আগে আমরা প্রতিবাদ করেছি। এবার প্রতিরোধের সময় এসেছে।”
পরে রাতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে যুবলীগ।