|| আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে ||
বিশ্বজুড়ে সর্বত্র করোনা আতঙ্ক। সারাদেশের সাথে কিশোরগঞ্জেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার কারণে জেলায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। এই অবস্থায় দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে ডিলাররা। কেউ আবার আত্মসাত করতে গিয়ে ধরাও পড়ছেন।
ইতিমধ্যে দশ টাকা দরের চাল চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন অনেক ডিলার ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এদের প্রায় সবাই সরকারি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। এক উপজেলায় বারবার ঘটছে চাল চুরি ও আত্মসাতের ঘটনা।
গত এক সপ্তাহে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর উপজেলায় কমপক্ষে ৩১১ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ৯ থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনে এসব চাল চুরির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, দুর্নীতি ও দুর্যোগ পাশাপাশি চলছে। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর নজরদারি।
স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত তাড়াইল উপজেলায় ১০৪ বস্তা, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৭৭ বস্তা, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৫৭ বস্তা, কটিয়াদী উপজেলায় ৩৯ বস্তা, হোসেনপুর উপজেলায় ২২ বস্তা ও বাজিতপুর উপজেলায় ১০ বস্তা চাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাড়াইল
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দিগদাইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ডিলার মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফাকে ৬০ বস্তা চালসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সোমবার প্রথমে রাহেলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ও দামিহা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলামের ভগ্নিপতি আবু খাঁর গোয়ালঘর থেকে ১৭ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ আইনুলের ভাই পাঞ্জু মিয়ার ঘর থেকে আরো ২৭ বস্তা চাল উদ্ধার করে।
করিমগঞ্জ
বৃহস্পতিবার উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের মরিচখালি বাজার থেকে ২৭ বস্তা সরকারি চাল তাড়াইলে পাচার হওয়ার সময় আটক করে পুলিশ। এ সময় ট্রলির চালকসহ দুজনকে আটক করা হয়। পর দিন শুক্রবার দুপুরে জাফারাবাদে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ঝোপের আড়াল থেকে ২৫ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। বুধবারও চামড়াঘাট থেকে ২৫ বস্তা চালসহ বাচ্চু মিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়।
কুলিয়ারচর
সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের আনন্দবাজার মাজার শরীফের পাশে ডিলার নাসির উদ্দিনের গুদাম থেকে ৫৭ বস্তা চাল উদ্ধার করেন ইউএনও। এসময় ডিলার নাসির উদ্দিনকে আটক করা হয়।
কটিয়াদী
সোমবার রাত তিনটার দিকে উপজেলার করগাঁও এলাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি করে দিয়েছে এমন খবর পেয়ে অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। পরে করগাঁও বাজারের একটি গুদাম থেকে ৩৯ বস্তা চাল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চাল ডিলার সেবা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নিখিল চন্দ্র সরকার (৫৫) ও ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিনকে (৪৫) আটক করে পুলিশ।
হোসেনপুর
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের জনতা বাজারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২২ বস্তা চালসহ ব্যবসায়ী আশরাফকে (২৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি নান্দাইল উপজেলার কন্ডবপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে সে পার্শবর্তী নান্দাইল উপজেলার এক ডিলারের কাছ থেকে কিনে স্থানীয় জনতা বাজারে নিয়ে এসেছিল।
বাজিতপুর
রোববার বিকালে উপজেলার হালিমপুরে একটি বাড়িতে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১০ টাকা কেজি দরের ১০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। তবে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি।#