|| অনলাইন প্রতিনিধি, বরিশাল ||
বাকেরগঞ্জের মুড়ির কারিগররা ভাল নেই। উপজেলার হাতেভাজা মোটা ধানের মুড়ির কদর সারাদেশে থাকলেও লকডাউনের কারনে যানবাহন বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে গেছে অর্ধেকেরও নিচে। অথচ সারা বছর জুড়ে বাকেরগঞ্জের হাতে ভাজা মোটা ধানের মুড়ি দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। বিশেষকরে রোজার একমাস আগে থেকেই মুড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায এই জেলায়। একজন করিগর প্রতিদিন হাতে ৫০ কেজি থেকে ১শ কেজি পর্যন্ত মুড়ি ভাজতেন। এবার সেখানে অলস পড়ে আছে সব মুড়ির খোলা।
উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বাখরকাঠিসহ কয়েকটি গ্রামের মুড়ি কারিগররা কয়েক যুগ ধরে জড়িয়ে আছেন মুড়ি ভাজার ব্যবসায়। দক্ষিণাঞ্চলের মোটা ধান বিশেষ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধ-শুকনা আর ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে মুড়ির উপযোগি চাল উৎপাদন আর তা দিয়ে মুড়িভাজায় রয়েছে এসব গ্রামের মানুষের বিশেষ দক্ষতা। কোন ধরনের রাসয়নিক ছাড়াই এসব মুড়ি ভাজা হয় বলে তা স্বাস্থ্যসম্মত। ইস্যৎলালচে রঙের এ মুড়িতে কোন ছিদ্র থাকেনা। হাতেভাজা বলেই বাকেরগঞ্জের মুড়ির স্বাদই বলে দেয় তা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Muri-02.jpg?w=1200&ssl=1)
বরিশালের রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বাখরকাঠিসহ আসপাশের গ্রামে রোজার চাহিদা মেটাতে নারীদের সঙ্গে পুরুষরাও সমানতালে মুড়ি তৈরির কাজ করে প্রতি বছর। তবে এবার চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। পরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বাইরের মুড়ির পাইকাররা খুব একটা আসছেন না। ফলে চাহিদা কম থাকায় কারিগরদের সারা বছরের আশা অনেকটাই নিরাশায় পরিনত হচ্ছে।
অপরদিকে বাকেরগঞ্জের মুড়ির কারিগরদের টিকে থাকতে হচ্ছে মেশিনে ভাজা মুড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে। ইউরিয়া ও হাইড্রোজ মিশিয়ে মেশিনে বড় ও সাদা করে মুড়ি ভাজা হয়। ফলে তার উৎপাদন ব্যয়ও কম। মেশিনের মুড়ির খরচ ও পরিশ্রম উভয়ই কম হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টেকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতে ভাজা মুড়ির কারিগরদের।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Muri-01.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Muri-01.jpg?w=1200&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Muri-01.jpg?w=1200&ssl=1)
স্থানীয় আড়তদার ও মিল মালিক ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, মেশিনে মুড়ি ভাজলে হাইড্রোজ মেশানো হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু অনেকই কম দামে পেয়ে মেশিনের ভেজাল মুড়ি কিনে খাচ্ছে মানুষ। এছাড়া কিছু ক্রেতা না বুঝে পরিস্কার ও আকারে বড় মুড়ি কিনতে চায়।
কিন্তু হাতে ভাজা মুড়ি তৈরিতে খরচও বেশি। মেশিনের মুড়ি যেখানে পাইকারি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতে হয় ৯০ টাকা কেজি। কিন্তু এবার করোনার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বরিশালে মুড়ি পল্লীতেও। পরিবহন সংকটে বকেরগঞ্জের মুড়ি এবার দক্ষিণাঞ্চলের বাইরে খুব একটা যাচ্ছে না। ফলে বাকেরগঞ্জের মুড়ি পল্লীর কয়েক হাজার পরিবারের অন্তত দশ হাজার কারিগরের কপালে এখন দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ।